Story of Mahabharat Part 157 Dusshasan killed by Bhim and fulfilled promise on 17th day in Bengali Spiritual Stories by Ashoke Ghosh books and stories PDF | মহাভারতের কাহিনি – পর্ব 157

Featured Books
Categories
Share

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব 157

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব-১৫৭

সপ্তদশ দিনের যুদ্ধে দুঃশাসন বধ ও ভীমের প্রতিজ্ঞা পালন

 

প্রাককথন

কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস মহাভারত নামক মহাগ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তিনি এই গ্রন্থে কুরুবংশের বিস্তার, গান্ধারীর ধর্মশীলতা, বিদুরের প্রজ্ঞা, কুন্তীর ধৈর্য, বাসুদেবের মাহাত্ম্য, পাণ্ডবগণের সত্যপরায়ণতা এবং ধৃতরাষ্ট্রপুত্রগণের দুর্বৃত্ততা বিবৃত করেছেন। নানা কাহিনি সংবলিত এই মহাভারতে সর্বমোট ষাট লক্ষ শ্লোক আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস পূর্বে নিজের পুত্র শুকদেবকে এই গ্রন্থ পড়িয়ে তার পর অন্যান্য শিষ্যদের শিখিয়েছিলেন। তিনি ষাট লক্ষ শ্লোকে আর একটি মহাভারতসংহিতা রচনা করেছিলেন, তার ত্রিশ লক্ষ শ্লোক দেবলোকে, পনের লক্ষ পিতৃলোকে, চোদ্দ লক্ষ গন্ধর্বলোকে এবং এক লক্ষ মনুষ্যলোকে প্রচলিত আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসের শিষ্য বৈশম্পায়ন শেষোক্ত এক লক্ষ শ্লোক পাঠ করেছিলেন। অর্জুনের প্রপৌত্র রাজা জনমেজয় এবং ব্রাহ্মণগণের বহু অনুরোধের পর কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস তাঁর শিষ্য বৈশম্পায়নকে মহাভারত শোনাবার জন্য আজ্ঞা দিয়েছিলেন।

সেইসব মানুষের সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য, যাঁরা বিশালাকার মহাগ্রন্থ মহাভারত সম্পূর্ণ পাঠ করেছেন। অধিকাংশ মানুষই মহাভারতের কিছু কিছু গল্প পড়েছেন, শুনেছেন বা দূরদর্শনে সম্প্রসারিত ধারাবাহিক চলচ্চিত্রায়ণ দেখেছেন, যা মহাভারতের খণ্ডাংশ মাত্র এবং মূলত কৌরব ও পাণ্ডবদের বিষয়ীভূত ও শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে নির্মিত।

মহাগ্রন্থ মহাভারত রচিত হয়েছে অসংখ্য কাহিনির সমাহারে, যে কাহিনিসমূহের অধিকাংশই কৌরব ও পাণ্ডবদের কাহিনির সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কিত।

সেই সমস্ত কাহিনিসমূহের কিছু কিছু কাহিনি সহজবোধ্য ভাষায় সুহৃদ পাঠক-পাঠিকাদের কাছে ধরাবাহিকভাবে উপস্থাপনা করার জন্য আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস আশা করি ভালো লাগবে।

অশোক ঘোষ

 

সপ্তদশ দিনের যুদ্ধে দুঃশাসন বধ ও ভীমের প্রতিজ্ঞা পালন

কর্ণ পাঞ্চালগণের সহিত যুদ্ধ করার সময় তার বাণের আঘাতে ধৃষ্টদ্যুম্নের এক পুত্র নিহত হলে কৃষ্ণ অর্জুনকে বললেন, কর্ণ পাঞ্চালগণকে বিনাশ করছে, তুমি সত্বর তাকে বধ করো। অর্জুন কিছুদূর এগিয়ে গেলে ভীম আবার তার সঙ্গে মিলিত হলেন এবং পিছনে থেকে অর্জুনকে রক্ষা করতে লাগলেন।

এই সময়ে দুঃশাসন নির্ভয়ে বাণ নিক্ষেপ করতে করতে ভীমের নিকটে এলেন ভীম ও দুঃশাসন পরস্পরকে আক্রমণ করলেন। ভীমের বাণের আঘাতে দুঃশাসনের ধনু ও পতাকা বিনষ্ট হোলো এবং সারথি নিহত হোলে দুঃশাসন নিজেই রথ চালাতে লাগলেন এবং অন্য ধনু নিয়ে ভীমকে আঘাত করলেন। ভীম অচেতন হয়ে রথের মধ্যে শুয়ে পড়লেন এবং কিছুক্ষণ পরে চেতনা ফিরে পেয়ে গর্জন কোরে উঠলেন। দুঃশাসন ভীমকে আবার শরাঘাতে বাণের আঘাতে পীড়ন করতে লাগলেন। ক্রোধে জ্বলে উঠে ভীম বললেন, দুরাত্মা, আজ যুদ্ধে তোমার রক্ত পান করবো। দুঃশাসন মহাবেগে একটি শক্তি অস্ত্র নিক্ষেপ করলে উগ্রমূর্তি ভীম তার ভীষণ গদা দিয়ে শক্তি অস্ত্র ভেঙ্গে ফেললেন এবং দুঃশাসন মাথায় আঘাত পেয়ে চল্লিশ হাত দূরে ছিটকে পড়লেন, তাঁর ঘোড়া ও রথও বিনষ্ট হোলো।

দুঃশাসন যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগলেন। তখন ভীম নিরপরাধিনী রজস্বলা অরক্ষিতা দ্রৌপদীর চুল ধরে বস্ত্রহরণ প্রভৃতি দুঃখ স্মরণ করে আগুনের মতো জ্বলে উঠলেন এবং কর্ণ, দুর্যোধন, কূপ, অশ্বত্থামা ও কৃতবর্মাকে বললেন, ওহে যোদ্ধৃগণ, আজ আমি পাপী দুঃশাসনকে হত্যা করছি, পারেন তো একে রক্ষা করুন। এই বলে ভীম তার রথ থেকে লাফিয়ে নামলেন। তারপর ভীম দুঃশাসনকে আক্রমণ কোরে গলায় পা দিয়ে চেপে ধরলেন এবং তীক্ষ্ণ তরবারি দিয়ে তাঁর বুক চীরে রক্তপান করলেন। তার পর ভূপতিত দুঃশাসনের মাথা কেটে রক্ত পান করতে করতে বললেন, মায়ের দুধ, মধু, ঘী, উত্তম মদ্, সুস্বাদু জল এবং দই প্রভৃতি অমৃততুল্য যত পানীয় আছে, সে সমস্তের চেয়ে এই শত্রুর রক্ত অধিক সুস্বাদু মনে হচ্ছে। তার পর দুঃশাসনকে মৃত দেখে ক্রুদ্ধ ভীম হাসতে হাসতে বললেন, মৃত্যু তোমাকে রক্ষা করেছে।

রক্তপায়ী ভীমকে যারা দেখছিল তারা প্রচণ্ড আতঙ্কে মাটিতে পড়ে গেল। তাদের হাত থেকে অস্ত্র খসে পড়ল, আর্তনাদ করতে করতে তারা ভীমকে দেখতে লাগল। এ মানুষ নয়, রাক্ষস - এই বলে সৈন্যগণ ভয়ে পালিয়ে গেল। কর্ণের ভাই চিত্রসেনও পালাচ্ছিলেন দেখে পাঞ্চালবীর যুধামন্য তাকে বাণের আঘাতে বধ করলেন।

উপস্থিত বীরগণের সামনে দুঃশাসনের রক্তে অঞ্জলি পূর্ণ কোরে ভীম সগর্জনে বললেন, পুরুষাধম, এই আমি তোমার রক্ত পান করছি, এখন আবার আমাকে ‘গরু গরু’ বলো দেখি! পাশা খেলার সভায় আমাদের পরাজয়ের পর যারা ‘গরু গরু’ বলে নাচ করেছিল, এখন নাচ কোরে তাদেরই আমরা ‘গরু গরু’ বলবো। তারপর মুখে দুঃশাসনের রক্ত মেখে ভীম কৃষ্ণ ও অর্জুনকে বললেন, আমি দুঃশাসন সম্বন্ধে যে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম তা আজ পূর্ণ হোলো। এখন দ্বিতীয় পশু দুর্যোধনকেও বলি দেবো এবং কৌরবগণের সামনে সেই দুরাত্মার মাথা পা দিয়ে পিষে দিয়ে শান্তিলাভ করবো। এই বলে মহাবল ভীম গর্জন করলেন।

______________

(ক্রমশ)