Story of Mahabharat Part 159 in Bengali Spiritual Stories by Ashoke Ghosh books and stories PDF | মহাভারতের কাহিনি – পর্ব 159

Featured Books
Categories
Share

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব 159

মহাভারতের কাহিনি – পর্ব-১৫৯

সপ্তদশ দিনের যুদ্ধের শেষে দুর্যোধনের বিষাদ ও যুধিষ্ঠিরের আনন্দ

 

প্রাককথন

কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস মহাভারত নামক মহাগ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তিনি এই গ্রন্থে কুরুবংশের বিস্তার, গান্ধারীর ধর্মশীলতা, বিদুরের প্রজ্ঞা, কুন্তীর ধৈর্য, বাসুদেবের মাহাত্ম্য, পাণ্ডবগণের সত্যপরায়ণতা এবং ধৃতরাষ্ট্রপুত্রগণের দুর্বৃত্ততা বিবৃত করেছেন। নানা কাহিনি সংবলিত এই মহাভারতে সর্বমোট ষাট লক্ষ শ্লোক আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস পূর্বে নিজের পুত্র শুকদেবকে এই গ্রন্থ পড়িয়ে তার পর অন্যান্য শিষ্যদের শিখিয়েছিলেন। তিনি ষাট লক্ষ শ্লোকে আর একটি মহাভারতসংহিতা রচনা করেছিলেন, তার ত্রিশ লক্ষ শ্লোক দেবলোকে, পনের লক্ষ পিতৃলোকে, চোদ্দ লক্ষ গন্ধর্বলোকে এবং এক লক্ষ মনুষ্যলোকে প্রচলিত আছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসের শিষ্য বৈশম্পায়ন শেষোক্ত এক লক্ষ শ্লোক পাঠ করেছিলেন। অর্জুনের প্রপৌত্র রাজা জনমেজয় এবং ব্রাহ্মণগণের বহু অনুরোধের পর কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস তাঁর শিষ্য বৈশম্পায়নকে মহাভারত শোনাবার জন্য আজ্ঞা দিয়েছিলেন।

সেইসব মানুষের সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য, যাঁরা বিশালাকার মহাগ্রন্থ মহাভারত সম্পূর্ণ পাঠ করেছেন। অধিকাংশ মানুষই মহাভারতের কিছু কিছু গল্প পড়েছেন, শুনেছেন বা দূরদর্শনে সম্প্রসারিত ধারাবাহিক চলচ্চিত্রায়ণ দেখেছেন, যা মহাভারতের খণ্ডাংশ মাত্র এবং মূলত কৌরব ও পাণ্ডবদের বিষয়ীভূত ও শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে নির্মিত।

মহাগ্রন্থ মহাভারত রচিত হয়েছে অসংখ্য কাহিনির সমাহারে, যে কাহিনিসমূহের অধিকাংশই কৌরব ও পাণ্ডবদের কাহিনির সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কিত।

সেই সমস্ত কাহিনিসমূহের কিছু কিছু কাহিনি সহজবোধ্য ভাষায় সুহৃদ পাঠক-পাঠিকাদের কাছে ধরাবাহিকভাবে উপস্থাপনা করার জন্য আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস আশা করি ভালো লাগবে।

অশোক ঘোষ

 

সপ্তদশ দিনের যুদ্ধের শেষে দুর্যোধনের বিষাদ ও যুধিষ্ঠিরের আনন্দ

হতবুদ্ধি দুঃখার্ত শল্য দুর্যোধনের কাছে এসে বললেন, ভরতনন্দন, আজ কর্ণ ও অর্জুনের যে যুদ্ধ হয়েছে তেমন আর কখনও হয়নি। ঈশ্বর পাণ্ডবদের রক্ষা করেছেন এবং আমাদের বিনষ্ট করেছেন। শল্যের কথা শুনে দুর্যোধন নিজের দুর্নীতির বিষয় চিন্তা কোরে এবং শোকে অচেতনপ্রায় হয়ে বার বার নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলেন। তার পর তিনি সারথিকে রথ চালাবার আদেশ দিয়ে বললেন, আজ আমি কৃষ্ণ অর্জুন ভীম ও অবশিষ্ট শত্রুদের বধ কোরে কর্ণের কাছে ঋণমুক্ত হবো।

রথ অশ্ব ও হাতিবিহীন পঁচিশ হাজার কৌরবপক্ষীয় পদাতিক সৈন্য যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হোলো। ভীম ও ধৃষ্টদ্যুম্ন চতুরঙ্গ সৈন্য নিয়ে তাদের আক্রমণ করলেন। পদাতিক সৈন্যের সঙ্গে ধর্ম অনুসারে যুদ্ধ করবার ইচ্ছায় ভীম রথ থেকে নামলেন এবং বৃহৎ গদা নিয়ে যমের মতো কৌরবসৈন্য বধ করতে লাগলেন। অর্জুন নকুল সহদেব ও সাত্যকিও যুদ্ধে রত হলেন। কৌরবসৈন্য ভীত হয়ে পালাতে লাগল। তখন দুর্যোধন আশ্চর্য পৌরুষ দেখিয়ে একাকী সমস্ত পাণ্ডবদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে লাগলেন। তিনি স্বপক্ষের পলায়মান যোদ্ধাদের বললেন, ক্ষত্রিয়গণ, শোনো, পৃথিবীতে বা পর্বতে এমন স্থান নেই যেখানে গেলে তোমরা পাণ্ডবদের হাত থেকে নিস্তার পাবে। ওদের সৈন্য অল্পই অবশিষ্ট আছে, কৃষ্ণ ও অর্জুন দুʼজনেই ক্ষতবিক্ষত হয়েছেন, আমরা সকলে এখানে থাকলে নিশ্চয় আমাদের জয় হবে। কালান্তক যম সাহসী ও ভীরু উভয়কেই বধ করেন, তবে ক্ষত্রিয়ব্রতধারী কোন্ মূর্খ যুদ্ধস্থল ত্যাগ করে? তোমরা পালালে নিশ্চয় ক্রুদ্ধ ভীমের হাতে পড়বে, তার চেয়ে যুদ্ধে নিহত হয়ে স্বর্গলাভ করা ভালো।

সৈন্যেরা দুর্যোধনের কথা না শুনে পালাতে লাগল। তখন ভীত ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় মদ্ররাজ শল্য দুর্যোধনকে বললেন, আমাদের অসংখ্য রথ ঘোড়া হাতি ও সৈন্য বিনষ্ট হয়ে এই রণভূমিতে পড়ে আছে। দুর্যোধন, নিবৃত্ত হও, সৈন্যেরা ফিরে যাক, তুমিও শিবিরে যাও, সূর্য অস্তে যাচ্ছেন। রাজা, তুমিই এই লোকক্ষয়ের কারণ। দুর্যোধন হা কর্ণ, হা কর্ণ’ বলে অশ্রুপাত করতে লাগলেন। অশ্বত্থামা প্রভৃতি যোদ্ধারা দুর্যোধনকে বার বার আশ্বাস দিলেন এবং মানুষ, ঘোড়া, হাতির রক্তে ভেজা রণভূমি দেখতে দেখতে শিবিরে প্রস্থান করলেন।

কল্পতরু যেমন পাখিদের আশ্রয়, কর্ণ তেমন প্রার্থীদের আশ্রয় ছিলেন। সৎস্বভাব প্রার্থীকে তিনি কখনও ফিরিয়ে দিতেন না। তার সমস্ত বিত্ত এবং জীবন কিছুই ব্রাহ্মণকে অদেয় ছিল না। প্রার্থিগণের প্রিয় দানপ্রিয় সেই কর্ণ অর্জুনের হাতে নিহত হয়ে পরমগতি লাভ করলেন।

যুধিষ্ঠির কর্ণ ও অর্জুনের যুদ্ধ দেখতে এসেছিলেন, কিন্তু পুনর্বার কর্ণের বাণে আহত হয়ে নিজের শিবিরে ফিরে যান। কর্ণবধের পর কৃষ্ণ ও অর্জুন তাঁর কাছে গেলেন এবং চরণবন্দনা কোরে বিজয়সংবাদ দিলেন। যুধিষ্ঠির অত্যন্ত প্রীত হয়ে কৃষ্ণও অর্জুনের রথে উঠলেন এবং রণভূমিতে শায়িত পুরুষশ্রেষ্ঠ কর্ণকে দেখতে এলেন। তারপর তিনি কৃষ্ণ ও অর্জুনের বহু প্রশংসা কোরে বললেন, কৃষ্ণ, তেরো বছর পরে তোমার কৃপায় আজ আমি সুখে নিদ্রা যাবো।

______________

(ক্রমশ)