A bitter disease with a sweet name in Bengali Magazine by Yogi Krishnadev Nath books and stories PDF | মিষ্টি নামের তিক্ত রোগ

Featured Books
Categories
Share

মিষ্টি নামের তিক্ত রোগ

মিষ্টি নামের তিক্ত রোগ

ডায়াবেটিস থেকে মুক্তির উপায় -

এটি শুধুমাত্র একটি বই নয়, এটি হচ্ছে ডায়াবেটিসকে নতুনভাবে বুঝে নেওয়ার একটি জীবনদর্শন। ইতোমধ্যেই এই বইয়ের কয়েকটি অধ্যায় মাত্রুভারতি প্ল্যাটফর্মে ধারাবাহিক আকারে প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে "মিষ্টি নামের তিক্ত রোগ" বইটি নোশন প্রেস থেকে প্রকাশিত করা হয়েছে।


ডায়াবেটিস—শব্দটা শুনলেই অনেকের মনে প্রথম যে অনুভূতিটা আসে, তা হলো ভয়। আজীবন ওষুধ, নিয়মিত রক্তপরীক্ষা, খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তা, আর ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা। কিন্তু আমরা খুব কমই ভাবি—এই রোগটা আসলে কীভাবে আমাদের জীবনের অংশ হয়ে উঠল, আর এর সঙ্গে বাঁচার মানে কী শুধুই ওষুধের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকা?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার একটি সৎ ও বাস্তব প্রয়াস হলো বইটি— “মিষ্টি নামের তিক্ত রোগ”।

এই বইটি ডায়াবেটিসকে শুধুমাত্র একটি সংখ্যার খেলায় সীমাবদ্ধ রাখে না। এখানে ডায়াবেটিসকে দেখা হয়েছে জীবনযাপনের এক গভীর সংকেত হিসেবে। ভুল খাদ্যাভ্যাস, সারাক্ষণ খেয়ে যাওয়ার অভ্যাস, অতিরিক্ত শর্করানির্ভর খাবার, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা ও মানসিক চাপ—এই সব মিলেই ধীরে ধীরে শরীরের স্বাভাবিক সুগার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করে তোলে। বইটি সেই পুরো প্রক্রিয়াটাকে খুব সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করেছে।

টাইপ–২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে এই কথাগুলো যতটা পরিচিত, টাইপ–১ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে ততটাই কম আলোচনা হয়। অথচ টাইপ–১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষদের জীবনেও খাদ্যাভ্যাস, দৈনন্দিন রুটিন, ঘুম, মানসিক চাপ এবং শরীরের ইনসুলিন ব্যবহারের দক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই বইটি টাইপ–১ ও টাইপ–২—দুই ক্ষেত্রেই জীবনযাপনের সেই দিকগুলোকে গুরুত্ব দিয়েছে, যেগুলো প্রায়ই উপেক্ষিত থেকে যায়।

“মিষ্টি নামের তিক্ত রোগ” কোনো ম্যাজিকের গল্প নয়। এখানে নেই কোনো গোপন ওষুধ, নেই রাতারাতি সুস্থ হয়ে যাওয়ার দাবি। বরং বইটির কেন্দ্রীয় বক্তব্য খুব স্পষ্ট—ডায়াবেটিস মানে শুধুই ইনসুলিন বা ট্যাবলেটের প্রশ্ন নয়; এটি শরীরের একটি সিস্টেম ভেঙে পড়ার গল্প। আর সেই সিস্টেমকে ধীরে ধীরে ঠিক করার পথও আছে।

বইটিতে বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে, কীভাবে শরীর দীর্ঘদিন অতিরিক্ত ইনসুলিনের চাপে নিজের সংবেদনশীলতা হারায় এবং কীভাবে জীবনযাপনের পরিবর্তনের মাধ্যমে সেই সংবেদনশীলতাকে আবার কিছুটা হলেও ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এখানে খাদ্য নিয়ে প্রচলিত বহু ভুল ধারণার সংশোধন করা হয়েছে। কী খাবেন তার থেকেও বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে—কখন খাবেন, কতবার খাবেন এবং কেন খাবেন।

একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই বই বারবার মনে করিয়ে দেয়—শরীরকে গ্লুকোজের উপর নির্ভরশীল রাখলে সমস্যার শেষ নেই। কিন্তু ধীরে ধীরে শরীরকে ফ্যাট মেটাবলিজমের দিকে নিয়ে যাওয়া গেলে শুধু সুগার নয়, ওজন, এনার্জি লেভেল, লিভার ও সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি লক্ষ্য করা যায়। এই পরিবর্তন কোনো একদিনে হয় না, কিন্তু সঠিক পথে দীর্ঘদিন চললে শরীর তার ভাষায় উত্তর দিতে শুরু করে।

এই বইটির সবচেয়ে বড় শক্তি হলো—এটি লেখা হয়েছে নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে। লেখক নিজে দীর্ঘদিন ডায়াবেটিসের সঙ্গে লড়াই করে, ওষুধনির্ভর জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে এই লেখাগুলো তৈরি করেছেন। তাই এখানে যে কথাগুলো বলা হয়েছে, সেগুলো বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ নয়—সেগুলো জীবনে প্রয়োগ করে দেখা পথের ফল।

বইটি খুব স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়—ফলাফল ব্যক্তি ভেদে আলাদা হতে পারে। টাইপ–১ ও টাইপ–২ ডায়াবেটিস এক নয়, প্রত্যেক শরীর আলাদা। কিন্তু সচেতন জীবনযাপন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়ম মেনে চলার মাধ্যমে শরীর যে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিতে শুরু করে, তা অস্বীকার করার মতো নয়।

যাঁরা ডায়াবেটিসকে শুধুই একটি রোগ হিসেবে না দেখে, নিজের জীবনকে নতুনভাবে বুঝতে চান—এই বইটি তাঁদের জন্য। এটি কোনো বিকল্প চিকিৎসার বই নয়; বরং এটি একটি জীবনদর্শন, একটি সচেতনতার গাইড।

“মিষ্টি নামের তিক্ত রোগ” বইটি বর্তমানে অ্যামাজন ও ফ্লিপকার্টে অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। যারা ডায়াবেটিসের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে নিজের শরীরকে নতুনভাবে বোঝার পথে হাঁটতে চান, তাদের জন্য এই বইটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সঙ্গী হয়ে উঠতে পারে।