Even today is... in Bengali Classic Stories by Brishti Roy books and stories PDF | আজু সখী

আজু সখী

ভোরের নরম রোদ টা মুখে পড়তেই, ঘুম টা ভেঙে গেল আকাঙ্খার। অন্যদিন হলে স্কুল যাওয়ার তাড়ায় ও ঠিক উঠে পড়তো, কিন্তু আজকে ওর উঠে যেতে ইচ্ছে করলো না। কারণ মাথা রাখার জায়গা টা ওর বড় প্রিয়। আস্তে আস্তে মুখটা তুলে দেখলো শশাঙ্ক এখনো ঘুমোচ্ছে। ওর বাম হাত টা আলতো করে জড়িয়ে রেখেছে আকাঙ্খার কোমর। ভোরের আলোতে শশাঙ্কের মুখটা ভ্যান গগের আঁকা পোট্রেট এর মত লাগছে। আকাঙ্খা ওর মুখের দিকে কিছুক্ষন মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকলো। আস্তে আস্তে ওর ঠোঁটে ঈষৎ হাসি খেলে গেল। মুখটা এগিয়ে নিয়ে গিয়ে শশাঙ্ক র কপালে এঁকে দিলো একটি চুম্বন। তারপর আস্তে আস্তে হাত টা সরিয়ে উঠতে যেতেই গাঢ় হয়ে এলো হাতের বাঁধন। তার কোমরটা জড়িয়ে ধরে শশাঙ্ক নিজের কাছে টেনে নিল। কিছুক্ষন দুজনেই একে অপরের দিকে চেয়ে রইলো। বোধহয় মনের গহীন কোণ গুলোর চুলচেরা বিশ্লেষণ করছিল দুজন দুজনের পৃথিবীর। তারপর হঠাৎ আকাঙ্খা এক ঝটকায় শশাঙ্কের হাত সরিয়ে খাট থেকে উঠে পড়ল, " এবার ওঠো, তোমার অফিস আছে তো, আমাকেও রেডি হতে হবে, স্কুলে আজ অনেক কাজ।"                                               আজ নতুন বা আনকোরা ঘটনা নয়,বর্তমানে  মা বাবা হীন শশাঙ্ক আর আকাঙ্খার জীবন এভাবেই বয়ে চলে। বিয়ে দেখাশোনা করে হলেও ওরা দুজন দুজনকে চিনতো বহুদিন ধরেই, সেই কলেজ লাইফ থেকে। শশাঙ্ক ছিল আকাঙ্খার দু বছরের সিনিয়র, ফিজিক্স ডিপার্টমেন্ট আর আকাঙ্খার ছিল বোটানি। যাইহোক কলেজ লাইফে যোগাযোগ বেশ ভালো মতো থাকলেও চাকরি পাওয়ার পর তা শ্লথ হতে হতে একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। সেই ছেঁড়া টেলিফোনের  তার আবার জুড়ে যায়, তাদের বিয়ের মাধ্যমে। ধীরে ধীরে তারা একে অপরের জগৎ হয়ে ওঠে। দুজন দুজনকে ছাড়া কিছু ভাবতেই পারে না, আর শশাঙ্কের মা বাবা মারা যাওয়ার পর সেই দৃঢ় বন্ধন আরো গাঢ় হয়। যাইহোক , দুটো ভালোবাসার মানুষ কাছাকাছি থাকলে , পাশাপাশি থাকলে নাকি পৃথিবীর কোনো শক্তি তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারে না। তবে জানে না কেন, আকাঙ্খার আজ বড় মনে কু ডাকছে। খালি মনে হচ্ছে ও যেন কিছু হারাতে  চলেছে। সেই জন্য স্কুলের কাজেও মন বসছে না, শশাঙ্ক অফিসে যাওয়ার পর বার পাঁচেক ফোনে কথাও হয়েছে, কিন্তু মনের খচখচানি টা কিছুতেই যাচ্ছে না। কিচ্ছুক্ষন পর স্বাভাবিক ভাবেই মাথা ধরে যায় আকাঙ্খার, শরীর টাও সাথ না দেওয়ায় ও স্কুল থেকে sick leave নিয়ে বেরিয়ে পড়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে। বাড়িতে পৌঁছে শরীর টা এলিয়ে দেয় বিছানায়। মাথাটা বড্ড ধরেছে আজ, না শশাঙ্ক কে জানিয়ে লাভ নেই, বেচারা আবার টেনশন করবে থাক। ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়ে টের পায় না ও। হঠাৎ মাথায় একটা চেনা স্পর্শ পেয়ে চমকে তাকায়, ঠিক ধরেছে শশাঙ্ক এসেছে। কিন্তু কটা বাজে? এত তাড়াতাড়ি ও চলে এলো? আকাঙ্খা ওর দিকে তাকিয়ে হেসে জিজ্ঞেস করলো ," কি বাবু মশাই, আজকে এত তাড়াতাড়ি যে ? কি ব্যাপার ?" শশাঙ্ক কোনো উত্তর দিলো না, আলতো হেসে হাত টা কপাল থেকে সরিয়ে নিল, তারপর পিছিয়ে যেতে থাকলো দেয়ালের দিকে। আকাঙ্খা অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইলো, তারপর প্রাণ পনে চেঁচিয়ে উঠলো, " না, না .... শশাঙ্ক, না.........."।।                                              ঘুম ভেঙে গেল বছর চল্লিশের প্রৌঢ়া আকাঙ্খা ঘোষের। চোখ মেলে কিছুক্ষন সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন তিনি। বাইরে ততক্ষনে বিকেলের শেষ আলো মরে এসেছে, একটা দুটো করে জ্বলে উঠছে রাস্তার বাতি গুলো। উঠে পড়লেন তিনি। আজকে দুজন অতিথি আসবে তাঁর বাড়ি। খাবার দাবার বানাতে হবে তো।                                   সন্ধে সাড়ে সাত টা নাগাদ ডোর বেল টা বেজে উঠলো। আকাঙ্খা এর জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। দরজা খুলতেই দেখা গেল দুটো হাসি মুখ। আকাঙ্খা সাদরে তাদের ড্রয়িং রুমে এনে বসালেন। নিজেও বসলেন সোফায়। তবে তাঁদের থেকে একটু দূরত্ব রেখেই। বললেন, " যাক , এতদিন পর কলেজের এই জুনিয়রের কথা মনে পড়লো তোমার শশাঙ্ক দা ?"                                                 শশাঙ্ক একগাল হেসে বললেন ," ধুরর, কি যে বলিস , তোকে ভুলবো ? বাবা আমাদের কলেজের 1999 এর ব্যাচের কেমিস্ট্রির ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট, মাষ্টার্স এ ফার্স্ট ক্লাস সেকেন্ড, এহেন স্টার মেয়ে যার পেছনে ছেলেদের লম্বা লাইন পড়ে থাকতো, কিন্তু সে কাউকে পাত্তাই দিত না, তাকে ভোলা যায়? কি বলো সহচরী?" শশাঙ্কের পাশে বসা তাঁর স্ত্রী সহচরী , আকাঙ্খার ই স্কুলের বান্ধবী, এবার হেসে বললেন , " তা আর বলতে? তবে ও তো বরাবরই এরকম । স্কুলে ও ও কাউকে পাত্তা দিত না। বিশেষ কথা ও বলতো না কারোর সাথে। ওই আমরা কয়েকজন ই ছিলাম। সত্যি, আকাঙ্খা , তুই সেই গম্ভীর , রাশভারী , সিরিয়াস type এর ই রয়ে গেলি, প্রেম তো করলি ই না, আর বিয়েটাও করলি না ! আকাঙ্খা শুনলেন, কিছু বললেন না শুধু হেসে বললেন , " আচ্ছা , তোমরা বোসো, আমি একটু চা টার ব্যাবস্থা করি।" শশাঙ্ক আর সহচরী গল্পতে মশগুল হয়ে গেলেন। হঠাৎ তাঁদের আলোচনায় ছেদ পড়লো,দুজনেই শুনতে পেলেন, রান্না ঘর থেকে গুনগুন করে একটা সুরেলা কণ্ঠস্বরে রবি ঠাকুরের গান ভেসে আসছে, " আজু সখী মুহু মুহু............"।।

Rate & Review

Debojyoti Banerjee

গল্পটা খুব ভালো হয়েছে৷ ❤️

Brishti Roy

Brishti Roy Matrubharti Verified 5 months ago

একতরফা প্রেমে একটা আলাদাই প্রশান্তি রয়েছে, অনেকটা সাগরের পারে পড়ে থাকা, বালিয়াড়ির মতো, ভেঙে চুরে দিলেও গড়ে তোলে নিজেকে, নতুন ভাবে, সাগরের জল তাকে শুধু স্নান করিয়ে দেয়। এরকমই না পেয়েও কাছে পাওয়ার মনকেমনের গল্প নিয়ে , আজু সখী।।

Share