Persue of illusion books and stories free download online pdf in Bengali

পিছুটান

আমি শ্রেষ্ঠা, শ্রেষ্ঠা সেন। বয়স 24, আদিবাসা মেদিনীপুর,এখন অবশ্য চাকরি সূত্রে জলপাইগুড়িতে। একটা এককামরার ফ্ল্যাট এ থাকি। চাকরি বলতে একটা বেসরকারি ফার্ম এ সামান্য কেরানির চাকরি...... আরে উঠে পড়লেন যে !কি ভাবছেন ? আমি এখানে সেই স্কুল এ লেখা myself paragraph লিখতে বসেছি? না, না একটু ধৈর্য ধরে শুনুন না।                                                  5 বছর আগে বাবার যখন একটা accident এ গুরুতর চোট পেয়ে ডানদিক অবশ হয়ে যায়, আর পোস্ট অফিস এর কেরানির চাকরি টা চলে যায়, তখন থেকে সংসারের হাল ধরতে একপ্রকার বাধ্য হয়েই এই চাকরি টা নিই। নাহলে পড়াশোনায় আমি খুব একটা খারাপ ছিলাম না, স্বপ্ন ছিল বাংলা অনার্স নিয়ে পাস করে প্রফেসর হব।সে কথা যাক, তো চাকরি পাওয়ার পর মোটামুটি সংসারের পেট চলে যেত। আমিও অস্থির মন টাকে একটু একটু করে শান্ত করে কাজে মনোনিবেশ করছিলাম। এরপর যা হয়, বিয়ের বয়স হয়েছে, মা বাবা বিয়ের জন্য জোরাজুরি করতে বলে দিলাম, আমি নিজে ঠিক খুঁজে নেব। যদিও জানতাম , একদম সাদামাটা দেখতে, আদ্যিকেলে একটা কেরানির চাকরি করা মেয়ে কে কেউ পছন্দ করবে না ।                               কিন্তু ভগবান বোধহয় সেরকম টা চাননি। আমাকে একজন পছন্দ করলো, ভালোও বাসল। ছেলেটির নাম মানব , আমাদের ই অফিসের এক ক্লায়েন্ট। একবার কিছু ডকুমেন্টস পেপার সই করাতে আমার বস আমাকে ওর অফিসে পাঠায়, সেখানেই আলাপ, আলাপ থেকে বন্ধুত্ব , বন্ধুত্ব থেকে প্রেম। সে আমাকে একটা চার চাকাও গিফট করেছিল , আমি নিইনি, তবে ওর জোরাজুরিতে মাঝে সাঝে রাত্রে অফিস থেকে ফিরতে দেরি হলে ওর গাড়িটা ব্যবহার করি।।                                      আজকে রাতে বেরোতে একটু বেশিই দেরি হয়ে গেল, একে শীতের রাত, তায় আবার সন্ধ্যে থেকে ঝিরঝিরে বৃষ্টি। ভাগ্যিস মানব আমায় গাড়ি টা চালানো শিখিয়ে ছিল, নাহলে এতরাতে ফিরতে সত্যিই কষ্ট হত। অন্তত এটার জন্য আমি ওর কাছে কৃতজ্ঞ। যাইহোক, বেরিয়ে পড়লাম গাড়ি নিয়ে , শুনশান রাস্তা, দুদিকের স্ট্রিট ল্যাম্প গুলো তাদের মরে যাওয়া হলুদ আলোতে নিজেদের জীর্ণ শরীর টা বৃষ্টির জলে ভিজিয়ে নিচ্ছে, স্পীড বাড়িয়ে দিলাম, আর 1 কিলোমিটারের মধ্যে মানবের অফিস। আমি নিশ্চিত ওর ও আজকে অফিসে late হয়েছে, আমার গাড়িতেই ওকে লিফট দিয়ে দেব।।                                                             ওই তো মানব , দাঁড়িয়ে আছে, এইতো এই দিকেই আসছে লিফট চাইতেই হয়তো, ওর একেবারে কাছাকাছি চলে এসেছি,ব্রেক টা কসলাম ...... মানবের রক্তাক্ত শরীর টা ছিটকে পড়লো কিছুটা দূরে। গাড়ি থেকে নেমে এলাম আমি, ধীরে ধীরে ওর কাছে গেলাম, তখনও বেঁচে ছিল,আমার দিকে তাকিয়ে ভয়ে , আতঙ্কে ওর চোখদুটো বড় বড় হয়ে গেল।আমার মুখে বোধহয় ফুটে উঠলো একটা অশালীন হাসি, যেখানে দুঃখ আর নিষ্ঠুরতা একসাথে খেলা করছিল।।।                                       একবছর আগে একরকম একটা বৃষ্টি ভেজা রাতে আমার অফিসে late হয়ে গিয়েছিল, গাড়িটা কি একটা দরকারে নিয়ে গিয়েছিল মানব, আমি ফোন করে বলি গাড়িটা নিয়ে আসতে , সেদিন ও রাস্তায় একটা বাস বা টোটো ও ছিল না।আমাকে ও বললো একটু রাস্তার দিকে নেমে আসতে, এসব অঞ্চলে শীতে কুয়াশায় একহাত দূরের বস্তুও দেখা যায় না , তায় আবার বৃষ্টি । আমি তাও রাস্তায় নেমে এলাম গাড়ি টার আলো দেখে থামতেও বললাম, কিন্তু ও আমায় দেখলো না, গাড়িটা পিষে দিলো আমায়। তারপরেও যতটা পারি মনের সব জোরটুকু দিয়ে ওকে বারবার বলছিলাম, নিয়ে যেতে আমায় হাসপাতালে। ও শুনলো না ,  বরং আমার শরীরের ওপর দিয়ে চালিয়ে দিলো গাড়ি টা। ফিরেও দেখলো না।                                                                         আমি এরপর বহুবার মন কে বুঝিয়েছি , এভাবে ভালোবাসার মানুষের ওপর প্রতিশোধ নেওয়া যায় না। কিন্তু শেষমেশ আমার মনের কাছে আমাকে হার মানতে হয়েছে, আজকে আমি ওকে নিজে হাতে ওর আমার প্রতি করা অন্যায়ের শাস্তি দিলাম। ও যদি আমাকে মেরে পালিয়ে যেত তাহলেও আমি কিছু করতাম না, কিন্তু ও মিথ্যে বললো, পুলিশি বয়ানে মিথ্যে বললো আমার বাবা মাকে মিথ্যে বললো।এটা আমি মানতে পারলাম না। আজকে তাই বাধ্য হলাম, এখন আমি মুক্ত, আমার শুধু একটাই প্রশ্ন থেকে গেল আমার হয়ে আজকে যে মানব কে মারলো, সে কি স্বার্থ, নাকি আত্মসম্মান, নাকি ভালোবাসা ?