মানুষের জীবনে যখন দুর্ভোগ আসে, ধ্বংস আসে, বিপর্যয় আসে,- তার আগে কিছু সংকেত টের পাওয়া যায়।
কারো মাথায় যদি সদগুরু অধিষ্ঠান করেন সর্বক্ষন,- তাহলে শয়তানরূপী বিপর্যয় তার ধারেকাছে সহজে ভিড়তে পারেনা। কারো মাথায় সদগুরু অধিষ্ঠান করছেন কিনা তা বুঝার উপায় হল,- তার চিন্তায়,মননে, কর্মে, কথায়, চলায়, আচরনে গুরু কতটুকু প্রকাশিত হচ্ছেন, গুরুর প্রতি সে কতটুকু সমর্পিত, গুরুর ইচ্ছাপূরনে সে কতটুকু দায়ীত্বশীল, নিজের দৈনন্দিন জীবনচলনায় গুরু কতটুকু অংশ অধিকার করে আছে,- তা লক্ষ করা। যতক্ষন কেউ নিজের মাথাটা গুরুর পায়ে দিয়ে রাখে,- ততক্ষন সে চেতন থাকে,ততই সে জীবনের পথে অগ্রসর হতে থাকে, ততই সে নিরাপদ থাকে।
সেই অবস্থায়,- তার জীবনে কর্মফল আসতেই পারে, প্রারব্ধের ভোগান্তি আসতেই পারে, ঝড়-ঝঞ্ঝা, কষ্ট, অভাব, রোগ ইত্যাদি আসতেই পারে। কিন্তু গুরু মাথায় থাকায়,- এগুলি তাকে ধ্বংস করতে পারেনা, তাকে নি:শেষ করতে পারেনা। সে যুদ্ধ করার শক্তি হারায় না। প্রয়োজনে মাটি কামড়ে পড়ে থাকে, সমস্যার সাথে যুদ্ধ করতে করতে সে ক্লান্ত হতে পারে,- কিন্তু এক সময় সে জয়ী হবেই। তার দু:সময় ও বিপর্যয় কাটবেই। মেঘ সরে গিয়ে তার জীবনে সূর্য্যের আলো ঝলমলে করে উঠেই।
কাল যদি কাউকে ধ্বংস করতে চায়,- তবে সর্বপ্রথম তার মনটাকে গুরুর বিপরীতে ঘুরিয়ে দিতে চেষ্টা করে। তাকে গুরু থেকে দূরে সরিয়ে নিতে চেষ্টা করে। এটাই সংকেত।
যখন দেখতে পাই,- কোন গুরুভাই, - যিনি একসময় নিয়মিত সৎসঙ্গে যেত,নিয়ত ইষ্টকর্মে ব্যাস্ত থাকত, মন্দিরে আসাযাওয়া করত, আচার্য্যসঙ্গ করার জন্য লালায়িত থাকত, যাজনকর্মে লিপ্ত থাকত,- হঠাৎ কিছুদিন যাবৎ সৎসঙ্গে যেতে আগ্রহ পাচ্ছেনা, মন্দিরে আসাযাওয়া কমিয়ে দিয়েছে, বারবার ডাকলেও ইষ্টকর্মে যুক্ত হতে সময় পাচ্ছেনা, যাজনে আগ্রহ কমে গেছে, আচার্য্যসঙ্গ করতে আগ্রহ পাচ্ছেনা, নিজের সংসার বা ব্যাক্তিগত কাজে এমন ব্যাস্ত হয়ে পড়ল যে গুরুর কাজে সময়ের টান পড়ছে,- তখন খুব ভয় হয়। বুঝতে পারি,- তার জীবনে অচিরেই কোন বড় বিপর্যয় আসতে চলেছে। বহুবার বহু গুরুভাইয়ের জীবনে অমন পরিনতি দেখে দেখে এই বাস্তব অনুভূতি হয়েছে।
আর,- যে মানুষটা একসময় গুরুর দীক্ষা নিয়েছিল, গুরুর কর্মে লিপ্ত ছিল, গুরু পূজা করত, ইষ্টভৃতি করত,- সে যখন হঠাৎ করে কোন ধান্ধায় বা কুবুদ্ধিতে লিপ্ত হয়ে গুরুর বিরুদ্ধাচারণ করতে থাকে, গুরু সম্পর্কে কুৎসা রটনা করে, নিজের ইগো বা স্বার্থে আঘাত লাগায় গুরু ত্যাগ করে দেয়,- তবে তার জীবনে যে মহাবিপর্যয় আসছে অচিরেই,- তাতে কোন সন্দেহ নেই। গুরুর বিপরীতে তার জীবনটাকে টেনে নিতে সচেষ্ট হয় শয়তানরূপী কাল,- তারপর তার গলায় কোপ বসায়।
তাই নিজের ইচ্ছাশক্তিকে গুরুর দিকে ন্যাস্ত রাখতে হয়। আমার ইচ্ছাশক্তির উপর কেউ হাত দিতে পারেনা৷ যখনই দেখবেন,- হঠাৎ করে সৎসঙ্গে যেতে আগ্রহ কমে যাচ্ছে, গুরুর কাজে লিপ্ত হতে সময়ের অভাব হচ্ছে, যাজনে আনন্দ কমে যাচ্ছে, - তখন জোর করে আরো বেশী বেশী যেতে হয় সৎসঙ্গে, আরো বেশী বেশী যাজনে ও ইষ্টকর্মে যুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হয়, আরো বেশী বেশী আচার্য্যসঙ্গ করতে হয়। তাহলেই কাল পরাস্ত হয়,- দু:সময় কেটে যায়।
যদি আপনার কোন বন্ধু, আত্মীয়, গুরুভাই বা পরিবারের কারো জীবনে অমন দেখেন,- হঠাৎ করে সৎসঙ্গে যেতে সময় পাচ্ছেনা, ইষ্টকর্মে ও মন্দিরে যুক্ত হতে অনিচ্ছা সৃষ্টি হচ্ছে, ইষ্টবিরোধী কথাবার্তা বলছে,- তবে বুঝবেন তার জীবনে অচিরেই মহাবিপদ আসছে। তখন জোর করে,-ভালবাসার ও বন্ধুত্বের অধিকার খাটিয়ে তাকে টেনে টেনে নিয়ে যেতে হয় সৎসঙ্গে, ইষ্টকর্মে ও যাজনে ডেকে ডেকে নিয়ে যেতে হয়, আচার্য্য সন্নিধানে টেনে নিয়ে যেতে হয়,- তাহলে হয়ত সে রক্ষা পেতে পারে।
তানাহলে তার দুর্দশা দেখে আপনারই মন বিষন্ন হবে কিছুদিন পর।অনেকের জীবনে এই সত্য উপলব্ধি করে করে আমার এই অনুভূতি হল।