গল্পটি সম্পূর্ণ বাস্তবতার বার্তা বহন করে না, কেবল মাত্র উপভোগ করার জন্য গল্পটি পড়ুন।গল্পটি দ্বারা কোনো রকম কোনো অসামাজিক কাজ বা কুসংস্কার কে সমর্থন করা হয় না।
🍁🍁🍁
বিয়ের এক দিন আগে,
নিউরোলজিস্ট আয়ান রয় চৌধুরীর কেবিনের ভিতরে,
তনিমা - হটাৎ করে ডাকলেন !
আয়ান - দরকার না থাকলে নিশ্চয় তোমাকে ডাকতাম না ।
তনিমা - হম , বলুন।
আয়ান নিজের হাতে থাকা ফাইল থেকে একটা কাগজ বের করে তনিমার সামনে এগিয়ে দিয়ে বলল,
আয়ান - এটাতে সই করো।
তনিমা কাগজটা হাতে নিয়ে দেখে অবাক হয়ে আয়ানের দিকে তাকালে আয়ান বলল,
আয়ান- এভাবে তাকিয়ে থাকার মতোও কিছু হয় নি ।
তনিমা - এটা !!!
আয়ান - কনট্র্যাক্ট পেপার বাংলায় চুক্তি পত্র , এবার সইনটা করো। আমি সময়ের অপব্যাবহার একদম পছন্দ করি না, জানো নিশ্চই।
আয়ানের এমন কঠোর কথা শুনে তনিমার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে । গড়িয়ে পড়া জল নিজের হাত দিয়ে মুছে নীরবেই চুক্তি পত্রে সই করে আয়ানের দিকে এগিয়ে দিল ।
আয়ান কাগজ গুলো ফাইলে গুছিয়ে রাখে, বেরিয়ে যেতে গিয়েও পিছন ফিরে তনিমা বলল,
তনিমা - আমার বাড়ির লোককে এই বিষয় কিছু জানাবেন না ।
আয়ান একটা তাচ্ছিল্যের হাসি নিজের ঠোঁটে ফুটিয়ে তুলে বলল,
আয়ান - কেন ? নিজের ভালো মেয়ের তকমাটা মুছে ফেলতে চাইছ না বুঝি এখনও…
তনিমা আর মুখে কিছু না বলে আয়ানের দিকে তাকিয়ে একটা বেদনা মিশ্রিত কিন্তু শান্ত হাঁসি ফুটিয়ে তুলল ঠোঁটের কোনে।আয়ান সেটা দেখে বলল ,আয়ান - চিন্তার কিছু নেই এ ব্যাপারটা আমি, তুমি আর আমার পিসির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে , এর বাইরে কেউ জানবে না। না তোমার বাড়ীর লোক না আমার বাড়ীর।তনিমা - ধন্যবাদ।
তনিমা আর কোনো কথা না বলে বেড়িয়ে গেলো ঘর থেকে।
___________________
৬ বছর আগে,
তনিমা পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল কিন্তু আবহাওয়া খারাপ থাকার কারনে কোনো বাস চলছে না , সাইকেলটাও খারাপ হয়ে গেছে তাই নিজের পায়ে হেঁটেই হসপিটাল কাম মেডিক্যাল কলেজে যাবে ঠিক করেছে , কলেজ টাও বেশি দূর নয় খুব বেশি হলে হেঁটে 30 মিনিটের পথ। তনিমা পাড়ার রাস্তা পেরিয়ে মেন রোডে সবেই উঠে ছিল, টিপটিপ করে বৃষ্টি হচ্ছিল অনেকক্ষণ থেকেই হটাৎ বৃষ্টিটা জোড়ে এলো সাথে ঝড়ো হাওয়া তনিমা এতক্ষণ ছাতা না বের করে কলেজের উদ্দেশ্যে রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিল বৃষ্টির জোরে আসায় নিজের ছাতাটা ব্যাগ থেকে বার করে নিজের মাথার উপর ধরল যাতে মাথাটা অন্তত বৃষ্টির জলে খুব বেশি না ভেজে সামনে এখনো প্রাকটিক্যাল এক্সাম আছে। তার আগেই যদি জ্বর বাঁধিয়ে বসে তাহলে আর এক্সাম দিতে পারবে না কিছুদূর গিয়েছিল হঠাৎ একটা কালো রঙের মার্সিডিস কার জোরে বেরিয়ে গেল ওর পাশ দিয়ে আর রাস্তার নোংরা জল ছিটকে তনিমার গায়ে গিয়ে পড়ল।
তনিমা মনে মনে ভাবল এই বড়ো গাড়ি থাকা এই মানুষ গুলোর এত ঔদ্ধত্য কোথা থেকে আসে, পাশ দিয়ে যে আমি যাচ্ছি এটার কোন খেয়ালই নেই গাড়িটা এত জোরে চালালো আমি পুরো ভিজেই গেলাম , মানুষকে মানুষ বলে জ্ঞান করে না । কলেজে পৌঁছতে তনিমার বান্ধবী তন্বী তনিমার কাছে ছুটে এসে তনিমার হাত ধরে নিজেদের যে রুমে সিট পড়েছে এক্সামের সেখানে টেনে নিয়ে গেল। আর মাত্র পাঁচ মিনিট মাত্র বাকি এক্সাম শুরু হতে । তনিমা নিজের ব্যাগ থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ফাইল থেকে বের করে জিনিস গুলো টেবিলে রেখে এলো ।
এক্সাম শেষ হলে এক্সাম হল থেকে বেরিয়ে তনিমা নিজের জিনিসপত্রগুলো ব্যাগের মধ্যে গুছিয়ে রেখে দিচ্ছিল পিছন থেকে তন্বী বলে উঠলো,
তন্বী - এতই যখন বৃষ্টিতে ভেজার শখ বৃষ্টিতে ভিজলে পারতি বাবা , নোংরা স্নান করে আসের কি প্রয়োজন ছিল এবার যদি ইনফেকশন হয় যায় এতক্ষন ধরে ভিজে অবস্থায় থাকলি পরের এক্সাম গুলো কি দেওয়ার ইচ্ছা নেই ?
তনিমা- কি আর বলব একটা বড় লোকের যাওয়া মানুষ জন পাশ দিয়ে এমন জোরে গাড়ি চালিয়ে চলে গেল যে রাস্তার সব নোংরা জল আমার গায়ে এসে পড়ল।
তন্বী - তা যা বলেছিস , এরা মানুষদেরকে মানুষ বলে মনে করে না।
তনিমা - আচ্ছা তুই কি এখন বাড়ি ফিরবি।
তন্বী তনিমার কথায় একটু ঘাবড়ে গেল তারপর মুখে হাসি রেখা ফুটিয়ে বলল ,
তন্বী - তুই এখন বেরিয়ে পড় । আমার দাভাই আমাকে নিতে আসবে আমি ওর সাথে বাড়ি যাবো। ও কখন আসবে সেটা জানিয়ে দেয় নি। যদি আসতে দেরি হয় তবে তোরও দেরি হয়ে যাবে । তুই তো বোধয় সাইকেল নিয়ে এসেছিস আর আজকে তো বাসও চলছে না তাই ভাবছি বাসস্ট্যান্ডের সামনেটা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করবো।
তনিমা - আর সাইকেল সাইকেলটা তো পুরো খারাপ হয়ে গেছে। সারাতে হবে ওটাকে।
তন্বী - বেশ তুই তবে এখনই বেরিয়ে পড় আস্তে আস্তে সাবধানে বাড়ি চলে যা । গিয়ে ভালো জলে একবার গাটা ধুয়ে একটা প্যারাসিটামল খেয়ে নিবি ।আমার সাথে গল্প করলে তোর দেরী হয়ে যাবে অযথা।
তনিমা - বেশ আমি তাহলে এগোলাম, তুইও সাবধানে বাড়ি যাস। তনিমা বাড়ি পৌঁছে দেখলো ওর মা রান্না ঘরে রান্না করছে আর ওর বাবা বাড়িতে নেই। ভাই এই সময় পাড়া ফেলে মেন রোডের গা ঘেঁষা লাইব্রেরীতে গেছে পড়ার জানে , সামনেই hs পরীক্ষা, ক্লাস 11 তো দেখতে দেখতে পেরিয়ে যাবে । তাই আর কোন প্রশ্ন না করে নিজের ঘরে চলে গেল ফ্রেশ হতে নিচে এসে কিছু খেয়ে ওকে যেতে হবে ভাইকে ডেকে আনতে - এটা ওর প্রতিদিনের রুটিন আর তার পর আজকের যা কিছু পড়েছে সব ঠিক আছে কিনা দেখতে হবে।
ভাইকে আনতে যাওয়ার সময় সাইকেলটাকে সাইকেল দোকানে দেখিয়ে নিতে হবে, সাইকেলটা মাঝেমধ্যেই খারাপ হয়ে যাচ্ছে কখনো লিক হয়ে যাচ্ছে কখনো বা চেইন পড়ে যাচ্ছে সাইকেলটা রেখে ভাইকে মাঠ থেকে আনতে গেল ।
আসার সময় সাইকেলটা নিয়ে দুজনে ফিরে এলো বাড়িতে। ভাই কে পড়া বুঝিয়ে দিয়ে তনিমা পড়তে বসে গেল ,পড়তে পড়তে ওর চোখটা লেগে গিয়েছিল তখন ।যখন তনিমার ঘুম ভাঙ্গে তখন প্রায় রাত সাড়ে নটা ওদের বাড়িতে খাওয়া দাওয়া দশটার মধ্যে হয়ে যায় কিন্তু আজ কোন হাক ডাক নেই দেখে খানিকটা অবাক হলো কারণ সাড়ে নটা থেকেই ওর মা ওদের ভাই বোনকে খাওয়ার জন্য তাড়া দিতে থাকে।
তনিমা কি হয়েছে ব্যাপারটা দেখার জন্য সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেল রান্নাঘরের দিকে রান্না ঘরেতে গিয়ে দেখল সেখানে অন্ধকার হয়ে আছে আলো জ্বালিয়ে কিছু দেখতে পেল না তেমন। রান্নাঘরটা সম্পূর্ণই খালি , এই সময় রান্না তো হয়ে যাওয়ার কথা। আর রান্না গুলো হয়ে গেলে সামনেই তো থাকবে ফ্রিজ তো ওদের নেই। তাহলে খাবারগুলো যাবে কোথায় খাবার টেবিলের সামনে গেল সেখানেও খাবার সাজানো নেই। মনের খটকা টা আরো বেড়ে গেল ভাইয়ের ঘরে গিয়ে দেখল ভাই ঘুমিয়ে কাদা তারপর চলে গেল মা-বাবাদের ঘরে।সেখানে গিয়ে দেখল মা শুয়ে আছে এই অসময়ে মা ঘুমায় না । কাছে গিয়ে দেখল মায়ের ধুম জ্বর বাবা এখনো বাড়ি ফেরেনি তাই বাবাকে ফোন করল। ফোন ধরে ওর বাবা বলল একটা বড় কাজ পেয়েছে তাই ওনাকে মাল ডেলিভারি করার জন্য শহরের বাইরে যেতে হচ্ছে।তনিমা ভয় পেয়ে গেল প্রথমে, বাড়ীতে বড় বলতে ছিল কেবল ওর মা উনিও এখন অসুস্থ এখন ও কি করবে । তবে এস এ মেডিক্যাল স্টুডেন্ট এই মুহূর্তে কী করা উচিত সেটা ও ভালো মতোই জানে মায়ের মাথায় জল পট্টি দিতে বসল জ্বর কিছুতেই কমছে না দেখে একটা জলের গামলা এনে মাকে একটু সরিয়ে নিয়ে গিয়ে মাথাটা ধুয়ে দিয়ে তারপর মাথাটা মুছে দিলো গামছা দিয়ে একটা গ্যাসের ট্যাবলেট আর প্যারাসিটামল খাইয়ে দিল রাত এগারোটার দিকে ওর মায়ের জ্বরটা নেমে গেল, জ্বরটা নেমে গেল উনি বিছনা থেকে উঠে তনিমার দিকে তাকিয়ে বলল ,- এখন তুই এই ঘরে কি করছিস ঘুমাসনি এখনো?
ক্রমশ…
গল্পটা পড়ে ভালো লাগলে রেটিং,রিভিউ দিও।