Blessed are the eyes - 4 books and stories free download online pdf in Bengali

নয়ন যে ধন্য - 4

নয়ন যে ধন্য

লেখক

নরেন্দ্র মোদী

(4)

_______________________________________

 

অনুবাদ

মল্লিকা মুখার্জী

_______________________________________

 

41

প্রার্থনা

 

মানবের ভিড় হোক বা মেলা,

আপনজনকে স্বাগত জানাই

আমার আবাসে।

দ্বারে লেখা রয়েছে-

‘সত্যের সাদর অভ্যর্থনা’

সত্য হতে পারে বিপক্ষে,

হতে পারে বিপরীতে।

 

বাগানের সুগন্ধের তুলনায়

দুর্গন্ধময় সার অতি মূল্যবান।

বিরোধিতার মাঝেও

সত্য খুঁজে নেওয়ার

সামর্থ্য আমার আছে।

গুজবকে পরিহার করে চলার

বিবেকও আছে।

গুজব দিয়ে জীবন জাপন করা যায়না।

 

 দুটো চরমের মাঝে লুকানো সত্যকে

সম্পন্ন করার ক্ষমতা আমি রাখি।

প্রত্যেকের সত্য ভিন্ন হতে পারে

এবং হয়।

আমি আমার

সত্যের কাছাকাছি থাকতে চাই,

সত্য আমার সূর্য।

আমার জীবন হয়ে যাক গায়ত্রী মন্ত্র,

এই প্রার্থনা করি অবিরত।

   

 

42

প্রেম

 

আমার প্রেম জলের শিকল ডোর,

বেঁধেও বাঁধা যায়না।

 

শপথের অনুবন্ধ আমি ভালোবাসি না,

তাতে কোনো প্রেম জাগে না।

আমার প্রেম ঘনীভূত শিশির,

ধরেও ধরা যায় না!

 

রোদ হাতের মুঠোয় আসে না যেমন,

সমীর কী খাঁচায় বন্দী হয়?

আমার প্রেম মেঘবলাকা,

ফাঁদে ধরা দেয় না!

 

কুয়াশা জমে আবার কেটে যায়,

তাতে সূর্যের কি কোনো ক্ষতি হয়?

আমার প্রেম উন্মগ্ন রাজহংস,

মালায় গাঁথা পরে না!   

 

43

ধ্রুব প্রচেষ্টা

 

আশা ছিল পাবো গিরি,

পেলাম পাথর সর্বশেষে।

পুষ্পিত বাগানের কামনা করেছি,

কাঁটা বিছানো পথে এসে।

 

শতবরসের কামনা নদীর,

পেলাম যদিও বুদবুদ।

উত্তপ্ত সূর্য রইল দুরে,

তজ্জনিত কালিমা হল সাথী।

 

চাঁদকে চাইলাম নিকট আমি,

হারিয়ে গেল আকাশ যেন!

সাগরের একটি লহর

তটে এসে কাঁদিল কেন?

 

44

মাঝরাতে  

 

মাঝরাতে কোকিল ডাকে,

হৃদয়ের দ্বার খোলে।

কোকিলকে বলবই বা কি!

 

মনের কথা মনেই রাখতে হয়,

জলের ব্যাপ্তি বিস্তৃত করতে নেই।

সকলে যে পরখ করে,

তাহলে কেন অনুভূতি উদ্ভাসিত করে?

কোকিলকে বলবই বা কি!

 

মনোবেদনা মনেই রাখতে হয়

বিশ্বাস যোগ্য মানুষ আর কোথায়?

বন্দ দ্বারে কেন যে ঝাঁকি দেয়,

খোঁজে মরীচিকা!

কোকিলকে বলবই বা কি!

 

45

মন আমার

 

মনের ভিতরে দাবানল,

প্রতিটি অঙ্গে প্রদাহের তাপ;

মরুর মধ্যে খুঁজি আমি  

সুরভিত সেই বাগ!

 

সুখী-দুঃখী দেখিলাম কত,

দেখিলাম রোগী-ভোগী!

ত্যাগ করিল মায়া যাহারা

কায়া তাদের নিরোগী।

রুনঝুন রুনঝুন তারে তারে

সাজে অজানা সোহাগ, 

মনকে আমার বোঝাই আমি

জাগ এবারে জাগ!

 

তুলে নিলাম কন্টক সব,

ফুলের জাজিম দিলাম পেতে।

শুষ্ক এই ধরনীর উরে,  

মেঘ্ধনু দিলাম গেঁথে। 

স্বেদ বিন্দুর তিলক খোঁজে

আমার ভাগ্য-ললাট!

 

46

মন দিয়ে নিবদ্ধ হও

 

আকাশ মিলনের অভিলাষী

এই গর্জনশীল সাগর, 

আমার প্রেরনা মূর্তি;

আমার যৌবনের

শক্তি এবং স্ফূর্তি।

 

সে সানাই বাজায়

আবার জয়ঘোষও করে,

গিরিশিখরে

ছোটো দেবালয়ও নির্মান করে!

 

কোনো কুলের বাধ্য নয়

এ সাগর,

গ্রহন করার ক্ষমতা থাকলে

সে আমাদের করতলে

রাখে ফেনার ফুল!

এই ফুলে প্লাবিত হয়

তরঙ্গিত বাগের সুরভি,

ফুল থেকে ঝরে নদীর বিলয়ের ব্যথা। 

সাগরে মিলিয়ে গেলে

নদী যে নিখোঁজ হয়ে যায়!

 

আমি

পর্বতের মতো অবিচল,

আবার

সাগরের মতো চঞ্চল।

তুমি আমায় ভাঙ্গতে পারো, 

আবার গড়তে পারো; 

ছাঁচে ঢেলে রূপায়িতও করতে পারো। 

 

হাতে ধর সমবেদনার গজাল

আর স্নেহের হাতুড়ি।

দিগন্তের প্রাচীর, 

আকাশের ছাত...

জনসমুদ্র, 

প্রানবন্ত সৃষ্টি। 

আমার গৃহের আকার, 

আমার অনুভূতির বিস্তার,

সমস্ত সংসার!     

 

47

মন্ত্র

 

শরদরাত্রি...মরুভূমি...

বালিকনা মনে হয় যেন স্বর্নকনা!

প্রতি মুহুর্তের এই সৌন্দর্য

আপনাতেই চিরন্তন হয়ে যায়।

 

জীবনপ্রবাহে  

প্রতিটি ক্ষণ আসে, চলে যায়।

জলস্ত্রোত, 

বায়ুপ্রবাহ, পুষ্পের সুরভি, 

প্রজ্বলিত প্রদীপ,

আলোকমালা!

সব অনুভূতি লাভ করি

কিন্তু এই ক্ষণস্থায়ী জীবনের

ঠিকানা তো জানা নেই, 

আবার খোঁজও করিনি।

 

গত কাল সন্ধেবেলায়

জীবন থেমেও যেতে পারত। 

যাপিত ক্ষনের অনুভূতি করা যায়,

পরবর্তী ক্ষনে

আশার প্রদীপ জালানো যায়। 

তিমিরও দীপ্তিকে চুমু দিতে পারে,

জীবনেপ্রবাহে ক্ষণ থেমেও যেতে পারে!

 

কিছুক্ষনের জন্য

জীবনের সাথে দেখা হয়েছে,

অনুভুতিও হল। 

চলতে-চলতে

কিছুক্ষণ থেমেও গেলাম, 

প্রতিটি প্রশ্বাসে সুগন্ধ পেয়েছি।

 

প্রতিটি কথায় ছিল ভালোবাসা,

যাপিত সন্ধ্যার স্মৃতি,

থামা আঁখিজলের সাথে

ভেসে যেতে চায়।

নিদ্রিত স্বপ্নে আছে নতুন ভোর!

 

যন্ত্র স্বরূপ জীবনে

পেয়েছি সৌন্দর্যের নতুন মন্ত্র!

 

48

মা আমায় শক্তি দাও  

 

হৃদয়্-কারাগারে বসে আছি মা,

আশীর্বাদ করো মোরে।

আমায় দীপ্তি দাও মা, আমায় শক্তি দাও।

 

দিও আমায় সাধুতা,

সৎ পথে যেন চলি আমি;  

আমার এই সংকল্প। 

তুমি আমার ভালোবাসা, 

তুমি আমার উপশম;  

আমায় দীপ্তি দাও মা, আমায় শক্তি দাও।

  

কামনা ভুলেছি আমি, বিরাগ চেয়েছি;

না ফুলের মায়া, না গন্ধের ছায়া।

তোমার মমতায় আছে কত রং, 

লাগে নাহি পর, মনে হয় আপন;

শুধু তুমি আমার কল্যাণ।

আমায় দীপ্তি দাও মা, আমায় শক্তি দাও।

 

বীরোচিত পথ আমার,

অনন্ত ভালোবাসা তোমার।

আমার জীবন-সাগরে  

শুধু তোমার অস্তি, শুধু তোমার কিস্তি।

সাগরও যদি কেঁদে ওঠে

কোনও দিন

তখনও আমি কিছু বলব না মা রে!

আমায় দীপ্তি দাও মা, আমায় শক্তি দাও।

 

বাগ-বাগিচা যদি

কখনও শুকিয়ে যায়,

ফুল যদি আপনাতেই নষ্ট হয়ে যায়;

মালিও লজ্জা বোধ করে

তখন তুমি

অশ্রুজল সেচন করে দিও,

আমার দোষ ধরো না মা!

 

ফুলের একটি মালা

তুমি এমন গেঁথে দাও

যাতে প্রকট হয়ে ওঠে ঈশ্বরের রূপ!

আমায় দীপ্তি দাও মা, আমায় শক্তি দাও।

 

 49

মায়া

 

আমার সাদা কাগজের মায়া,

সাদা কাগজের হৃদয় পানে

কত চেহারা লুকিয়ে আছে!

 

সাদা কাগজে ঘন মেঘের ছবি। 

বৃষ্টি হলে

তৃণভূমি হয়ে যায় এই সাদা কাগজ।

কোথাও দেখা যায় বৃক্ষ আর পাহাড়, 

নয়ন শুনিতে পায় পবনের প্রশ্বাস। 

নিঃশব্দভাবে সকলকে করেছি আপন।  

 

ভ্রমর, প্রজাপতি, 

ঝিকিমিকি জোনাকি,

বাঁধে পর্ণকুটির।

কাগজের গন্ধে পাই আমি

প্রথম বর্ষার সৌগন্ধ!

আমি পেয়েছি মোলায়েম ছায়া, 

আবৃত করেছি অচেনা প্রতিচ্ছায়া। 

 

50

মেলায় একত্র হতে দাও

 

ভিড় কে মেলায় পরিণত করাই

আমার ধর্ম,

আমার কর্ম।

 

মেলাতে মানুষ একত্র হয়,

দেখা করে,

অপূর্ব সময় কাটায়।

 

আমি জানি শুধু ‘আছে’,

‘নেই নেই’ মুছে দিই।

সম্পর্ক বজায়ে রাখি।

 

মানবের সঙ্গে রয়েছে মাধব,

রয়েছে রাঘব।

আমার সাথে আছে বাঁশি,

আবার আছে শিবের ধনু।

দেবতা আর দানবের মাঝে

আমি কেবল মানুষ,

মানুষ হওয়াই বড় কথা।

 

পৃথিবীতে আমি স্বর্গ দেখতে চাই,

এই ভিড় যেন মেলায় পরিণত হয়!

 

51

যাত্রা

 

সুদুর অতীতে আমি ফিরে তাকাই,

প্রতিটি চেহারা স্পষ্ট দেখতে পাই।

স্মৃতির উপর

চাপ সৃষ্টি অনর্থক,

সবকিছু সহজেই দেখা যায়,

সহজেই চেনা যায়।

কিছুই থাকেনা গোপন।

 

সহজ কথা হল,

যাদের সঙ্গে থেকে কষ্টভোগ করেছি,

ভুলতে পারি না।

সাথে ভোগ করা যন্ত্রনা

অবশেষে হয়ে যায় যাত্রা!

 

52

রহস্য

রাতের কালিমা গায়ে দিয়ে দাঁড়ান

বৃক্ষ আমি দেখতে চাই না।

আমি দেখত চাই

ভর দুপুরের রোদ ধারন করে

দিনের আলোয় দাঁড়ান বৃক্ষ।

পুষ্পিত এবং পাখিদের কলতানে ভরা বৃক্ষ!

 

বৃক্ষের

প্রাতের খুশি,

মধ্যাহ্নে যৌবনের মাতন,

সন্ধ্যেবেলার ধীশক্তি

আমার রোমে-রোমে গ্রাহ্য করতে চাই।

 

বৃক্ষ আমার অন্তরের নিনাদ,

মধ্যাহ্ন বেলায় দাহক প্রাণ আমার

তার ছায়ায় আশ্রয় নেয়,

নিদ্রিত হয়।

পাই আমি স্নিগ্ধ শীতল বাতাস,

বর্ষার মিহি ধারা।

 

বৃক্ষ আমার অস্তিত্বের বিকল্প,

আমার রহস্য!

 

53

রমেশ পারেখ

 

বসন্তপঞ্চমীর মেলায় হঠাত্‍ অমার প্রতিচ্ছায়া,

স্বপ্ন রোপনের পূর্বেই এল শরতকালীন ছায়া।

 

ভর দুপুরে রাত  উঠেছে, চোখে অন্ধকার। 

রমেশ ছাড়া প্রাণ যে আমার হল নিরাধার,

কাল হল ভয়ানক, আঁখি  জল  হতবাক!

 

রমেশের অক্ষরকে আমি দিই নক্ষত্রের নাম,

অমরেলী কে মনে রেখে, দিই কবিতার গ্রাম। 

কাহাকে প্রকাশ করিব এই অনুভূতি, আঘাত!

 

চক্ষুবিহীন চশমা দিয়ে রমেশকে দেখতে পাই,

শব্দের আধার লয়ে কবিতার নিকট যাই।  

রমেশ তোমায় ফ্রেমের যোগ্য করে নিলাম আজ!

 

(রমেশ পারেখ গুজরাতের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক, অমরেলী শহরে  থাকতেন।)