Blessed are the eyes - 5 - last part books and stories free download online pdf in Bengali

নয়ন যে ধন্য - 5 - Last Part

নয়ন যে ধন্য

লেখক

নরেন্দ্র মোদী

 

(5)

_______________________________________

 

অনুবাদ

মল্লিকা মুখার্জী

_______________________________________

 

54

লক্ষ্যসন্ধানে

 

লক্ষ্যসন্ধানে নিজেরে ভুলে

দৌড়িয়ে, লাফিয়ে,

কখনো টলে,

রক্ত দাগী পথে চলি আমি!

আবার

বিশুদ্ধ লাল

পদচিহ্ন দেখে

অশ্রুভরা নয়নে হাসি আমি!

 

পূর্বপুরুষদের রুধির-শয্যা হতে

প্রতিবিম্বিত রবিকিরণের দীপ্তি

আমার মৃদুহাস্যকে নিষ্প্রভ করে দেয়,

তখন আমার ‘আমি’

বিলীন হয়ে যায়।

লক্ষ্য নিকট মনে হয়,

দ্রুতবেগে চলি আমি।

 

 

55

বন্দে মাতরম্

 

বন্দে মাতরম্

শুধু গান নয়,

আমাদের উদঘোষনা, 

নিরাপত্তা, ঐশ্বর্য।

স্বাধীনতার মহাযজ্ঞের নৈবেদ্য।

স্বদেশপ্রেমের স্বরমাধুর্য।

উন্নয়নের অবিরত স্পন্দন,

আমাদের সহজ পরিচয়।

 

১৮৫৭ সালের জ্যোতি:পুঞ্জ,

সত্যের জন্যে  

রক্তের অভিষেক

অবিরত.....

 

বন্দে মাতরম্

শুধু শব্দ নয়, আমাদের মন্ত্র।

স্বাধীনতার তেজোময় স্পন্দন!

প্রগতির রাজপথ,

সংকল্পিত রাষ্ট্রজীবনের মহাপথ।

জনসাধারণের প্রাত:কালীন

প্রবুদ্ধ চেতনার স্বর,

বন্দে মাতরম্.....

 

 

56

বিষম ও অদ্ভূত

 

চাঁদ ওঠার সাথে

সাগর তরঙ্গিয়া না ওঠে!

সূর্যোদয় হতেই

সূর্যমুখী না হাসে!

নদী যদি

সাগরে না মেলে!

ফুল ফোটে আর

ভ্রমর গুন-গুন না করে!

ঘন্টাধ্বনি হয়

আর মন্দিরের দ্বার না খোলে!

দীপ প্রজ্বলিত হয়

আর মন্দির জ্বলজ্বল না করে!

প্রেম কী

এতই বিষম ও অদ্ভুত হতে পারে?

 

57

বিস্ময়ের ভোর

 

অস্ত গেল পরাজয়ের রাত, 

উদিত হল ঝলমলে প্রভাত!

প্রভাতকে উদযাপন করো, 

হবে জ্যোতির্ময় পরবর্তী সকাল!

তিমিরের প্রাচীর ভগ্ন হল আজ, 

উদিত হল যে বিজয় প্রভাত!

 

ধরে চল সকলে শপথের পথ, 

আমাদের রনবীর রনধীর রথ।

সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলো আজ, 

পরিত্যাগ করে নিজস্ব স্বার্থ।

কাননে সুরভিত কত ফুলগাছ,

উদিত হল আজ বিজয় প্রভাত!

 

বাতাবর্ত থেমে গেল, 

নির্মল গগনতল!

কন্টক হল দূর, 

ফুলে ভরা ধরাতল,

নেই কোনো ব্যথা কথা, 

না আছে শোক-বিষাদ

উদিত হল আজ বিজয় প্রভাত!

 

হর্ষধ্বনি আজ আকাশে-বাতাসে, 

স্বপ্নের সুগন্ধ ছড়ালো শয়নে।

রামের প্রতি আস্থা সর্বদা,  

হৃদয়ে নেই কোনো অননুরাগ।   

উদিত হল আজ বিজয় প্রভাত!

 

 58

ব্যথাকে বইতে দাও

 

ব্যথাকে  বইতে দাও, অশ্রুজল  ঝরতে দাও।

ঝরে যায় যদি ফুল, ধুলোয় মিশে যেতে দাও। 

 

স্বপ্ন নিষিক্ত হয়েছে, 

জড়িয়ে গেছে অকারণে।

আঁখির পাতে থামা অশ্রুকে  

শুধু চাতকের মতো তাকিয়ে থাকতে দাও। 

ব্যথাকে বইতে দাও, অশ্রুজল ঝরতে দাও।

 

সময় কেটে যায়, আশা মৃদু হাসে

অজানা কোনো আনন্দধ্বনিতে।

আমার নয়ন-সরোবরে হাঁসকে ভ্রমণ করতে দাও।

ব্যথাকে বইতে দাও, অশ্রুজল ঝরতে দাও।

 

সুখ-দুঃখের এই স্বপ্ন যে অলৌকিক মায়া,

আমি গায়ে দিয়েছি ঘন মেঘের ছায়া।

পুঁজিত মেঘকে প্রিয় অবাধে

বৃষ্টি হয়ে পড়তে দাও।  

ব্যথাকে বইতে দাও, অশ্রুজল ঝরতে দাও।

 

 

59

শব্দ

 

আমার শব্দ শৈল,

সাবলীল শব্দ  নদীর  কলকল  ধ্বনি।

এক-অপরের সম্পূরক শৈল-নদীর বাণী!

 

পথ আমাদের ভিন্ন

যদিও সঙ্গী তুমি আমার,

স্মরণে রেখেছে মোদের

এই অনন্তের পাড়।

গল্প-কথকের রাজা আমি,

তুমি অনুকাহিনীর রানী!

 

এক নদীর দুটি কুল

একটি আমার, একটি তোমার,

কাল অবিরত বয়ে যায়

যেন পাখি যাযাবর।

জানা কথা-ব্যাথা

রইল অজানা বরাবর।

 

60

সনাতন ঋতু  

 

প্রতিদিনের এই সভা,

জনসাধারণের ভিড়!

ঘিরে থাকে ফটোগ্রাফার, 

আওয়াজকে সম্প্রসারিত করে মাইক।

এই সবের অভ্যাস হয়নি,

ঈশ্বরের কৃপা।

 

বড় আশ্চর্য হয়,

কোথা থেকে ফুটে এই শব্দের ঝরনা? 

কখনো অন্যায়ের খিলাফ, 

আমার আওয়াজের নজর উঁচু হয়।

কখনো শব্দের ধীর স্থির নদী বয়ে যায়

আবার কখনো বসন্তের বৈভব হয়ে যায়।

আমার শব্দ

নিজেই অর্থের জামা পরিধান করে নেয়।

শব্দের কাফেলা অনবরত চলতে থাকে, 

আমি লক্ষ করি তাদের গতি!

 

অত শত শব্দের মাঝে

আমি বাঁচিয়ে রাখি আমার গোপনতা, 

একান্তে বসে আমি  

উপভোগ করি সনাতন ঋতু।

 

 

61

স্বপ্নের বীজকনা

 

পাথরকে আমি বলি পাথর,

আবার জলকে বলি জল,

আমি বাস্তব মেনে চলি।

আকাশের দিকে তাকাই,

মুগ্ধ করে রামধনু আমায়

তবে

আমি রামধনুতে ঘর বাঁধার কথা ভাবি না। 

আমিও সাতটি রঙের স্বপ্ন দেখেছি

কিন্তু রোমান্টিক নয়,

এই স্বপ্ন আমার সারা জীবনের সাধনা। 

 

তোমাদের কোনো স্বপ্নের কথা জানা নেই

তবে আমি স্বপ্নের বীজকনা

আমার হৃদয়ে রোপন করেছি। 

পরিশ্রমের জলসেচন করে

প্রতীক্ষা করছি

তার অঙ্কুরিত হবার। 

 

আশা করি বটবৃক্ষে পরিনত হবে আমার স্বপ্ন,

বিরাট পুরুষের বাহুর মতো। 

বিকশিত হবে আকাশছোঁয়া তার শাখা-প্রশাখা, 

আশ্রয় নেবে পাখিরা।

তাদের কন্ঠে, নদীর ধারা হয়ে

ধ্বনিত হবে ঈশ্বেরের গান।    

 

62

সমন্বয়

 

নিশার গর্ভ হইতে প্রকট দিনকে বলি,

‘এসো আমার কাছে এসো’

আমি তোমায় ভালোবাসি,

তোমায় দেখে মৃদু হাসি।

আমি জানি না কার সাথে কে আছে, 

কিন্তু জানি

আমরা দুজনে একসাথে

ফুলের মত প্রস্ফুটিত ও সুরভিত হই।

কন্টকের পরোয়া করিনা।

 

দিবসের শাখে শুধু

ফুল পুষ্পিত হয়না,

পাখির মধুর গানও সুরভিত হয়।

পাখির গানের কোনো রূপ নেই,

আছে নিরাকার গতি।

 

স্থিতি এবং গতির সমন্বয়

করাই আমার সাধনা।

এসো, আমরা দুজনে

এই সাধনার সৌভাগ্য লয়ে

যথাসম্ভব জীবন উপভোগ করি।

 

63

সমুদ্রের যাত্রী

 

সহৃদয়তা,

সরলতা, 

আমার জীবনের পাল। 

তারামণ্ডল,

চন্দ্রকলা,

আমার আকাশস্থ গুরুজন, 

আমার পথদর্শক।

 

আকাশী গুরুজনেরা কী জানে,

বিভাজিত করা হল দেশকে

সাগরে ফাটল করে?

অসীম সাগরে

কী হিন্দুস্তান কী পাকিস্তান?

সীমান্ত পার করার

এই তো শাস্তি প্রতিদিনের!

 

কেউ আসে না আসুক,

মুক্তি দিক না দিক,

কিন্তু মনে স্বদেশপ্রেম

যেন সাগরে অগ্নিচ্ছটা!

 

 

64

সংকল্প

 

কোনো সময় উদিত হয়

দাহক সূর্য,

আতপ্ত দিনে

অভিতপ্ত হই।

আতসী নভে

খুঁজি শীতল তল,

আলোকরেখার তীরকে

নিরাবরণ করি। 

ছায়া-প্রতিচ্ছায়ার

গোলকধাঁধা বিঁধি,

বিকল্পের স্রোতে

অবর্ণনীয় সংকল্প পাই। 

 

সংকল্পের আলো, 

সংকল্পের উর্জা, 

সংকল্পের উর্মি, 

সংকল্পের সাহচর্য, 

উঠতি সন্ধ্যা, 

গোধুলি, 

এই তো সম্পন্নের আভা, 

ধনীর শোভা।

 

জীবন কখনই পরবশ নয়  

আর বিবশতা আমার রক্তে নেই। 

 

65

স্মৃতি

 

হালকা হালকা স্মৃতির প্রদীপ

অন্ধকারকে গ্রাস করতে চায়

ঘনান্ধকার কে গ্রাস করা

কী এতই সহজ?

 

বৃক্ষ থেকে পাতা ঝরে

তেমনই ঝরে স্মৃতি।

স্মৃতির ঝরা মানে কী?

স্মৃতিকে ভরা মানে কী?

স্মৃতির প্রভাব কত?

স্মৃতির হৃদয়ে

হিল্লোলিত হয় মরুভূমি,

স্মৃতি যেন বৈশাখের মধ্যাহ্ন, 

স্মৃতি নখ নয় নখর।

নিভে যাক এই স্মৃতির প্রদীপ,

কেটে যাক তার ডানা।

ঠেলে দিতে পারিনা যখন

হারিয়ে যাক তার দৃষ্টি।

 

স্মৃতির জিহ্বা কেটে দিলেও

কহন থামানো যায় না।

স্মৃতির নয়নে অন্ধকার, 

স্মৃতি তিমিরে পথ হারায়।

স্মৃতি কণ্ঠরোধ করে

ধ্বনিত হয় জীবন

শুধু স্মৃতির জন্য।

 

স্মৃতির কত রং-রূপ, 

স্মৃতি ছায়া, আবার রোদ।

স্মৃতির নেই পদচিহ্ন

না আছে পদধ্বনি।

স্মৃতির কি উদয়

আর কি অস্ত?

স্মৃতির মরণ কোথায়,

আধার কোথায়?

স্মৃতির নেই কোনো দেহ, 

না আছে আবাস।

স্মৃতি যে ঝরনা,  

ভাসছে জীবন স্মৃতিতেই।

 

 

66

হিন্দু হিন্দু মন্ত্র 

 

অত্র তত্র সর্বত্র, হিন্দু হিন্দু মন্ত্র।

বিন্দু বিন্দু এক মন্ত্র,

সিন্ধু সিন্ধু এক মন্ত্র।

এই মন্ত্র যেন মুক্তা,

অন্ধকারের জ্যোতি।

আমরা আলোক ছড়াব!

 

জাতিভেদ মিটিয়ে,

নিজের সর্বস্ব দিয়ে,

জনসাধারণকে হাসি দিয়ে, 

পুরুষার্থের গান গেয়ে,

অন্তরে মন্দির স্থাপিত করব।

আমরা আলোক ছড়াব!

 

পর নয় কেউ সবাই আপন,

এইতো আমাদের রীতি।

বিসংগতি ছেড়ে

নতুন সংলাপ রচব।

 আমরা আলোক ছড়াব!

 

অন্ন-বস্ত্র, সংস্কার, সুবিধা,

সহজেই হবে প্রাপ্য।

সবুজবর্ণ হবে অয়ন,

তারাভরা হবে গগন।

একতা, মমতা ও সমতার

যত্ন নেবো, রক্ষা করিব।

  আমরা আলোক ছড়াব!

 

 

67

একাদশ দিক

 

নির্ভয় চিত্ত, 

লয় ধরা গান, 

প্রাণ বাঁধা নিরাময় প্রীতি, 

স্বপ্নময় হাসি,

পুলকিত বাতাস,

অখণ্ডিত জল, 

সুরভিত আকাশ,

পাবন করে প্রতিটি মুহূর্ত।

 

পৃথিবী স্নেহময় সুগন্ধিত।

বিশ্ববিধাতা আমার সখা,

তারে দেখী অনবরত।

না অনাগত না অতীত,

কেবল বর্তমানে অঙ্কিত।

 

নেই কোনো প্রথা না

আছে কোনো রীতি,

নীরবতা হয় মুখরিত।

দশটি দিকের ওপারে

একাদশ দিকে বাজছে সঙ্গীত!