Poetry of dawn books and stories free download online pdf in Bengali

দহন কালের কাব্য

দহন কালের কাব্য

শফিকুল ইসলাম

মিজান পাবলিশার্স

প্রারম্ভিক কথা...

আমরা সবাই চাই

একটা শোষণ-মুক্ত সমতা ভিত্তিক

সবার কাছে গ্রহণযোগ্য সমাজ ব্যবস্থা।

চাইলেই কি হবে --

বাস্তবতা বলে যে,

স্থান কাল ভেদে মাত্রার ভিন্নতা থাকলে ও

পৃথিবী যতদিন থাকবে

শোষণ-বঞ্চনা অন্যায়-অবিচার

ততদিনই থাকবে...

আর ততদিনই নিপীড়িত মানুষের

সংগ্রামী চেতনা

মুক্তির স্বপ্ন দেখবে-

সেই স্বপ্নের পদযাত্রার বাণীরূপ

এই কাব্যগ্রন্থ...

নিরন্তর সংগ্রামে

মানুষকে উদ্বুদ্ধ রাখার প্রয়াস-দৃপ্ত

এই কাব্যের পংক্তিমালা-

আর মানুষের মুক্তি যে একদিন আসবেই

এই প্রত্যয়ে ঋদ্ধ ॥

উৎসর্গ

উদয়ের পথে শুনি কার বাণী

ভয় নাই ওরে ভয় নাই,

নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান

ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।

সুচিপত্র

সম্মুখে বাধা আছে পথ, বন্ধুর ১

পথ যতো হোক বন্ধুর, বন্ধু যেওনা থামি ২

যা কিছু দূর্জয় আমরা জয় করবো ৩

জীবনকে যদি পেতে চাও ৪

ঝড় এবার শুধু একটা ঝড় আসুক ৫

বেচে থাকাটাই শেষ কথা নয় ৬

আশা ও আশ্বাসের দিন অপগত ৭

আমি প্রতিদিন স্বপ্ন দেখি ৮

একদিন জাগবো আমি প্রচন্ডভাবে ৯

আমার দেশের শ্রমিকের বলিষ্ঠ বাহু ১০

জয় হবে জয় হবে ১১

এসো আজ মুক্ত বিশ্বের গান গাই ১২

বিশ্ব বিপ্লবী চেগুয়েভারা স্মরণে ১৩

মৃত্যুভয়ে যেজন ভীত ১৫

আজ নিখিল আর্ত মানবতা ১৬

হারিয়ে যাবে কি বন্ধু অবশেষে ১৭

জানি এ রাতের শেষে আসবে ১৮

পড়ে পড়ে আর মার খাবনা মা ১৯

হাতের শৃংখল পরে খুলো ২০

কমরেড আমরা প্রস্তুত ২১

কমরেড এক অসম যুদ্ধে ২২

কমরেড তুমি ঘুমাও ২৩

আমরা একটা নতুন পৃথিবী গড়বো ২৪

জনতার শক্তি বড় শক্তি ২৫

তুমি আমি কেউ নইকো আলাদা ২৬

শ্রমজীবি জনতা গড়ে তোল ঐক্য ২৭

একটি মুক্ত পৃথিবীর জন্য ২৮

আমাদের কেন খুজো হন্যে হয়ে ২৯

আমাদের ভুল বুঝো না ৩১

আধার দেখে ভয় পেওনা ৩২

মরতে তো হবে সবাইকে একদিন ৩৩

মানুষ আর কতটুকু মানুষ ৩৪

প্রাণের যত ভীরুতা আর ৩৫

সময় এসেছে এবার ৩৬

দিগন্তে আজ ঝড় অত্যাসন্ন ৩৭

শেষ যুদ্ধের প্রস্তুতি চলছে এখানে ৩৮

আমাদের সঙ্গী জাগ্রত জনতা ৩৯

আজ লাঞ্চিত বঞ্চিত মানুষের দীর্ঘশ্বাসে ৪০

আমরা চাইতে আসিনি কিছু ৪১

ভাগ্যের দোহাই দিয়ে করবে প্রবঞ্চনা ৪২

আমরা কৃষক এ মাটির সন্তান ৪৩

বেশী কিছু চাইনি তো আমরা ৪৪

মানুষের অধিকার আজ ভুলুন্ঠিত ৪৫

এই মাটি এই আকাশ ৪৬

দেখতে দেখতে ক্রমশ সবকিছু ৪৭

অপেক্ষায় আছি ৪৯

জনতার শক্তি বড় শক্তি এই মনোবলে ৫০

আমরা খুব কাছে এসে গেছি ৫১

হে তরুণ তোমা পানে চেয়ে আছে ৫২

হে তরুণ তুমি শুধু বল জয় হবে ৫৩

মুক্তি পিয়াসী ৫৪

সংক্ষুব্ধ পংক্তিমালা ৫৫

সম্মুখে বাধা আছে,পথ বন্ধুর

সম্মুখে বাধা আছে,পথ বন্ধুর

তবু জানি যেতে হবে বহুদূর ।

পায়ে ফুটুক যতই কাটা

থামলে চলবেনা এপথ হাটা-

সীমিত সময়, পথ অনেক দূর ।

চলতে পথে শত কুমন্ত্রণা

হাসি মুখে সয়ে যত যন্ত্রণা,

করতে হবে মোকাবিলা শত্রুর ।

সত্যের পথ কুসুমিত নয়

জেনেই বিপ্লবীর চলতে হয়-

বিপ্লবী মন পরোয়া করেনা মৃত্যুর ।

পথ যতো হোক বন্ধুর, বন্ধু যেওনা থামি

পথ যতো হোক বন্ধুর, বন্ধু যেওনা থামি

আসবেই আসবে সুন্দর আগামী ।

আধার দেখে চমকে উঠনা ত্রাসে

আধার রাতের শেষে সূর্য হাসে,

আজ মাভৈ বানী শোনাই তোমায় আমি ।

সত্যের পথ কখনও সংক্ষিপ্ত নয়

সত্যের পথ কখনও নিষ্কন্টক নয়,

জানে পৃথিবীর সব মুক্তিকামী ।

মাঝ পথে তুমি থমকে দাড়িয়ে পড়না

সামনে আছে শুনে মৃত্যুর সম্ভাবনা,

মৃত্যুহীন কোন জীবন নেই, জানো তুমি ।

দ্বিধাহীন চিত্তে যারা দিয়ে গেছে জীবন

তারাই পৃথিবীতে এনেছে নব জীবন,

প্রমাণ দিয়েছে জীবনের চেয়ে সত্যই দামী ।

দীর্ঘ পথের ক্লান্তি সইতে না পেরে

অনেকেই এপথ হয়ত দেবে ছেড়ে,

শত বাধা বিঘ্নে বুকে আশা জ্বালিয়ে রেখো তুমি ।

সত্যের পথে নেই কোন যাত্রা বিরতি

অবিশ্রান্ত পথ চলাই আনবে মুক্তি,

নতুন দিনের আমন্ত্রণ জানাই তোমায় আমি ॥

যা কিছু দূর্জয়, আমরা জয় করবো

যা কিছু দূর্জয়, আমরা জয় করবো

যা কিছু দুর্গম আমরা অতিক্রম করবো ।

আমাদের পথচলা নয় গড়া পথ ধরে

আমরা পথ চলবো পথ গড়ে গড়ে

সমতল পথ ছেড়ে আমরা বন্ধুর পথে নামবো ।

আমরা মন্দের আনবো মন্দ নিয়তি

সুন্দরের আনবো সুন্দরতম পরিণতি

আমরা অনন্তের অন্ত, অসীমের সীমা খুজবো ॥

জীবনকে যদি পেতে চাও

জীবনকে যদি পেতে চাও

আপন হাতের দৃঢ় মুঠোয়,

পেতে চাও দৃঢ় অধিকারে--

তবে ছিন্ন করো স্বপ্নের বন্ধন।

বেরিয়ে পড়ো

তন্দ্রাকে করো দূর,

যুদ্ধ করো

সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ো

মুখোমুখি দাড়াও রূঢ় বাস্তবের-

উদ্ধত আকাংখার কাছে

নির্বিকার জীবন চিরদিন পরাহত ॥

ঝড়, এবার শুধু একটা ঝড় আসুক

ঝড়, এবার শুধু একটা ঝড় আসুক

একটা কিছু হোক, এবার একটা কিছু হোক।

দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে দেখছ কি

পালাবার পথ রুদ্ধ,দাড়াতে হবে মুখোমুখি--

নামো এবার রাজপথে সাহসে বেধে বুক।

বৃথাই চেয়েছ করুণা এতদিন অশ্রুজলে

আপন অধিকার কেড়ে নিতে হয় বাহুবলে--

আমাদের পানে চেয়ে আছে কোটি লাঞ্চিত মুখ।

দিলে শ্রম, রক্ত, ঘাম কিছু তো বাকী নয়

ওদের তবে কেন আর করো এত ভয়--

আলোতে ও ওরা দেখে না, অন্ধ ওদের চোখ ॥

বেচে থাকাটাই শেষ কথা নয়

বেচে থাকাটাই শেষ কথা নয়

বাচার মত বাচাই বড় কথা,

শেষ পর্যন্ত শির উচু করে

থাকাটাই শেষ কথা।

পৃথিবীতে কত প্রাণী বেচে আছে

মূষিক বাচে, সিংহ ও বেচে আছে

সিংহের মত বাঁচাটাই বড় কথা

নরসিংহ হয়ে বাচাই সার্থকতা।

এড়াতে চাইলেও বিরোধিতা

সব সময় সম্ভব হয় না-

যতই হোক অসম সমর

জেনো প্রতিবাদই বড় কথা-

আসবে সাফল্য নয় তো ব্যর্থতা ॥

আশা আশ্বাসের দিন অপগত

আশা ও আশ্বাসের দিন অপগত

বিশ্বাসের দিন বিলুপ্ত

অতীতের অতিকায় লুপ্তপ্রায় প্রাণীর মত।

মনুষ্য মর্যাদা তাই বারবার লাঞ্চিত,

মানবিক বিশ্বাস সংশয়ে প্রশ্নবিদ্ধ।

হায়, কবে ফিরে পাবে মানুষ

মানুষের প্রতি সেই আস্থা-

বিপদে-সম্পদে কবে আবার

মানুষের পারস্পরিক উপস্থিতি

হবে নিশ্চিত ও অনিবার্য ॥

আমি প্রতিদিন স্বপ্নœ দেখি

আমি প্রতিদিন স্বপ্ন দেখি

একটি সুখী পৃথিবীর

এক নতুন পৃথিবীর-

যেখানে মানবিক প্রয়াস নিবেদিত

মানবিক কল্যাণে।

প্রতিদিনকার নিত্যনৈমিত্তিক

দ্বন্ধ-সংঘাত হতে

আমি বাচিয়ে রাখি

আমার এ স্বপ্নকে সযত্নে

এক উজ্জ্বল আশায়।

যেখানে মানুষ আবার

সব হিংসা-দ্বেষ বৈরীতা বৈষম্য ভুলে

পরস্পর ভালবাসার হাত ধরে

দাড়াবে এক সারিতে

নব জীবনের উজ্জল সূর্যের প্রত্যাশায়।

শত অশ্লীল কোলাহলে

স্বার্থ-কলুষিত হানাহানিতে ও

আমার এ স্বপ্ন

আমি হারাতে দেবনা, কিছুতেই দেবনা ॥

একদিন জাগবো আমি প্রচন্ডভাবে

একদিন জাগবো আমি প্রচন্ডভাবে

দেখতে সবাই আমাকে অবাক বিস্ময়ে,

পুরনো আমাকে নতুন করে চিনবে সবাই নব পরিচয়ে।

আমার মাঝে সুপ্ত আগ্নেয় প্রতিভা

চমকে দেবে সবাইকে সহসা,

প্রচন্ড বি্স্ফোরণে এই পৃথিবীটাকে দেবো কাপিয়ে।

পোষমানা এই প্রাণের তলে

যে আপোষহীন প্রাণ কথা বলে,

তার অভাবিত প্রকাশে সবাই যাবে অবাক হয়ে।

জ্বলে উঠে হয়তো নিভে যাবো চিরতরে,

তবু যে আগুন জ্বালবো ঘরে ঘরে

তা জ্বলবে যুগ যুগ ধরে-

আমি যাবো, যাবার আগে পৃথিবীটাকে যাবো কাপিয়ে ॥

আমার দেশের শ্রমিকের বলিষ্ঠ বাহু

আমার দেশের শ্রমিকের বলিষ্ঠ বাহু

আমার সংগ্রামী উদ্দীপনা-

কৃষকের ঘামে ভেজা মুখ বাচার প্রেরণা।

যে শ্রমিক কাজ করে কলে-কারখানায়

যে কৃষক মাঠে ফসল ফলায়,

সভ্যতার পথ যারা গড়ে দিল

তারাই আমার স্বজন, আমার চিরচেনা।

মাটির পৃথিবীকে যারা দিল প্রাণ

অথচ যারা পেলনা মানুষের সম্মান,

সেই সব শ্রমজীবি মানুষের সমাবেশই

আমার স্থায়ী ঠিকানা ॥

জয় হবে, জয় হবে

জয় হবে, জয় হবে

এবার মেহনতী জনতার জয় হবে,

শ্রমিকের, কৃষকের, তাতী আর মজুরের

হাত এবার হাতিয়ার হবে।

ললাটের ঘাম আর দেহের শ্রম দিয়ে

পরের ভাগ্য এতদিন দিয়েছি বদলায়ে,

এবার বুকের রক্তে আপন ভাগ্য বদলাতে হবে।

পথ গড়ে দিয়ে আর পথে থাকবো না পড়ে

আমদের চলতে হবে সম্মুখের পথ ধরে,

সব নিন্দা কুসংস্কার দূরে ঠেলে

আমাদের প্রগতির পথে চলতে হবে ॥

এসো আজ মুক্ত বিশ্বের গান গাই

এসো আজ মুক্ত বিশ্বের গান গাই

আমরা সবাই মুক্ত স্বাধীন,

আজকের পৃথিবীতে কেউ নয় কারো অধীন।

আজ অন্ধ মনের বন্ধ দুয়ার খুলে

দাড়াও এসে মুক্ত আকাশের তলে,

মনের পাখী মেলুক ডানা আজ

শৃংখলবিহীন।

আজ হোক এই সূর্যোদয়ের ভোরে

ভীরুতা আর দাসত্বের অবসান চিরতরে,

আমাদের সম্মুখে সম্ভাবনার উজ্জ্বল দিন

অন্তবিহীন ॥

বিশ্ব বিপ্লবী চেগুয়েভারা স্মরণে

চে, আর সবার মত

সঞ্চিত পরমায়ু ভোগবিলাসে নিঃশেষ করে

তোমার অনিবার্য মৃত্যু হতে পারতো-

সে মৃত্যু কাউকে এতটা দোলা দিত না।

তোমার এই অনির্ধারিত অগ্রহণযোগ্য মৃত্যু

সত্যের জন্য সাহসী লড়াই করতে যেয়ে তোমার মৃত্যু,

মৃত্যুকে করেছে মহিমাণ্বিত

আর আমাদের করেছে উদ্দীপ্ত।

চে, তুমি মিশে আছো

শোষিত বঞ্চিত জনতার দীর্ঘশ্বাসে

আর মুক্তিকামী মানুষের আপোষহীন স্বপ্নের মাঝে;

অমন মহৎ মৃত্যু আমাদের উদ্বুদ্ধ করে

শোষণ নিপীড়নের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে।

যদিও আমাদের চেতনায় তুমি চিরঞ্জীব

তবুও তোমার মৃত্যুকে স্বীকার করে নিলেও

তোমার মৃত্যুঞ্জয়ী আদর্শের মাঝে

তুমি চিরজাগ্রত

এবং চিরজাগ্রত থাকবে চিরকাল।

তোমার অমূল্য আত্মদান

অনির্বাণ মশাল হয়ে

সত্যের জন্য চূড়ান্ত ত্যাগ স্বীকার করতে

মানুষকে যুগ যুগ ধরে প্রেরণা যোগাবে ।

আর ঐসব কাপুরুষদের ঘৃণা করতে শেখাবে ॥

চে, তোমার মৃত্যু আমাদের প্রতিটি অন্তরে

এক একটি চে-এর জন্ম দিয়েছে--

আমাদের এই অন্তরের চে’ কে হত্যা করে

এমন কোন মারণাস্ত্র আজও তৈরী হয়নি

পৃথিবীতে তেমন কোন শাসক শোষকের

অদ্যাবধি জন্ম হয়নি।

চে, তোমার আরদ্ধ স্বপ্নের

সফল সমাপ্তি আমরা আনবোই

জীবন দিয়ে হলে ও তোমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবো;

চে, তোমার স্বপ্নের মাঝে তুমি বেচে থাকবে চিরকাল।

চে, পৃথিবী যতদিন থাকবে

শোষণ বঞ্চনা ততদিনই

স্থানভেদে মাত্রাভেদে বলবৎ থাকবে;

আর ততদিনই বঞ্চিত নিপীড়িত মানুষকে

তোমার মহিমাণ্বিত আত্মদান

সংগ্রামী প্রেরণা যোগাবে ;

ততদিন তোমার স্মরণ

অনিবার্য আবেদন নিয়ে

আমাদের আন্দোলিত করবে।

তোমার সেই রেখে যাওয়া

রক্তাক্ত স্মৃতির কাছে

আমরা ফিরে যাবো বারবার

আমাদের প্রয়োজনে ॥

মৃত্যুভয়ে যে জন ভীত

মৃত্যুভয়ে যে জন ভীত

জীবনকে সে তত হারায়,

বীরের জীবন মৃত্যুতে মহিমা খুজে পায়।

জীবন মানে সংগ্রাম আমরণ

বীরের তীর্থ ক্ষেত্র ঐ রণাঙ্গন,

মৃত্যুভীত ভীরু কাপুরুষ

মরণ ডেকে আনে পায় পায়।

পৃথিবীতে পক্ষ দুটি --

অধিকারহারা আর অধিকারহরণকারী,

এ দ্বন্দ্ব শাশ্বত --

এ দ্বন্দ্ব থাকবে যুগ যুগ ধরে;

যে জিতবে তারই হবে জয়

পৃথিবী তারেই শুধু চায় ॥

আজ নিখিল আর্ত মানবতা

আজ নিখিল আর্ত মানবতা

কেদে যায় দ্বারে দ্বারে,

বেরিয়ে আসো, কোথায় কে আছ বন্ধু মানবতার

থেকো না আর বদ্ধ ঘরে।

পুঞ্জীভূত শোষণ আর অবিচার

আজ রুদ্ধ করেছে কণ্ঠ মানবতার,

এসো আজ সবাই মিলে ভাষা দেই

তাদের অবরুদ্ধ কন্ঠস্বরে।

দীর্ঘ দিনের শোষণ বঞ্চনার

রক্তের ভাষায় জবাব দেবো এবার,

আজ আর ঘরে ফিরবো না তো

শেষ বুঝাপড়া না করে ॥

হারিয়ে যাবে কি বন্ধু অবশেষে

হারিয়ে যাবে কি বন্ধু অবশেষে

সময়ের দুর্বার তরঙ্গের টানে,

রুখে দাড়াও বন্ধু একবার

বয়ে নিয়ে চল তরী উজানে।

যত হোক এ অভিযাত্রা কষ্টকর

সংক্ষিপ্ত করে আনো প্রতিক্ষার প্রহর,

আশার সঞ্চার করো

যত আশাহতের জীবনে।

যুগ যুগ ধরে প্রচলিত শোষণ বঞ্চনা

এভাবে আর নীরবে মেনে নেয়া যায় না,

মৃতের শ্মশানে জাগুক জীবন

তোমার উদাত্ত আহবানে ॥

জানি রাতের শেষে আসবে রাঙা প্রভাত

জানি এ রাতের শেষে আসবে রাঙা প্রভাত

আমরা নতুন প্রভাতকে আগাম স্বাগত জানাই,

পোহালে এ রাত, আসবেই আসবে আগামী প্রভাত

রক্তের অক্ষরে তাই মুক্তির ইতিহাস লিখে যাই।

গভীর রাতে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে তোমরা যখন

মনের আনন্দে মুক্ত আগামীর দেথছ স্বপন,

আমরা তখন দেয়ালে দেয়ালে মুক্তির পোষ্টার সেঁটে যাই।

বসে আছো পরম নিশ্চিন্তে তোমরা যখন

সব দুঃখ বঞ্চনার ভার ভাগ্যের হাতে করে সমর্পণ,

আমরা তখন প্রতি ঘরে ঘরে আসন্ন সংগ্রামের ডাক দিয়ে যাই ॥

পড়ে পড়ে আর মার খাব না মা

পড়ে পড়ে আর মার খাব না মা

আমরা এবার লড়বোই,

বেচে থাকার সংগ্রামে

আমরা এবার জিতবোই।

সত্যের পক্ষে আমরা লড়ছি

আমাদের কিসের ভয় ?

আমদের মনে নেই কোন দ্বিধা সংশয়-

অবশেষে দেখো মা আমরা

বিজয়ী বেশে ফিরবোই।

মৃত্যু আমাদের হয় হোক ভয় করি না--

জানি শাশ্বত সত্যের মৃত্যু হতে পারে না,

সব বাধা দুপায়ে দলে দলে

দৃপ্ত পদক্ষেপে আমরা এগিয়ে যাবোই ॥

হাতের শৃংখল পরে খুলো

হাতের শৃংখল পরে খুলো

আগে শৃংখল মুক্ত করো চিত্ত,

সবার আগে দূর করো মন হতে

বিবেকের বন্ধ্যাত্ব।

মনের মাঠ সিক্ত করো ঘন বর্ষণে

বৃষ্টি নামুক খরা কবলিত এই জীবনে,

মানবতার দুর্ভিক্ষের এই দিনে

আজকে এই হোক বড় সত্য।

জীবনে নয় অসম্ভব প্রাচুর্য বিলাসিতা

আজ আগে দূর করো হৃদয়ের দীনতা,

দূর হোক আজ সত্যকে ঘিরে

চারদিকে মিথ্যার আধিপত্য ॥

কমরেড আমরা প্রস্তুত

কমরেড আমরা প্রস্তুত

শুধু তোমার আদেশের অপেক্ষায়,

তোমার বাশী বেজে উঠলেই

ঝাপিয়ে পড়বো বিনা দ্বিধায়।

বিপদ বাধা বিঘ্নে নই আমরা কুন্ঠিত

আমরা এগিয়ে যাব অপ্রতিহত

শেষ পর্যন্ত আমরা লড়ে যাব দৃঢ়তায়।

আমাদের দাবী সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত

আমরা তো মৃত্যু ভয়ে নই ভীত।

হয় জয় না হয় মৃত্যু-

আমরা একটাকে বেছে নেব-

শত্রুর ধ্বংস স্তুপে আমরা

বিজয় পতাকা উড়াবো।

ওরা গুটিকয়

কেড়েছে অধিকার কোটি জনতার,

তাদের শান্তিতে থাকতে

দেবনা আমরা-

তাদের পরাজিত করে

আমরা আনব মুক্তি এই ধরায় ॥

কমরেড এক অসম যুদ্ধে

কমরেড এক অসম যুদ্ধে

তুমি দিয়েছো জীবন,

তোমাকে জানাই রক্তিম অভিবাদন।

তোমার রক্তের বদলা আমরা নেবো

তোমার রক্ত ছুয়ে শপথ নিলাম,

রক্তের বিনিময়ে আমরা তোমায়

করবো শ্রদ্ধা নিবেদন।

তোমার পবিত্র রক্তে যারা

প্রিয় মাতৃভূমি করেছে রঞ্জিত,

তাদের ক্ষমা নেই-

তাদের নিশ্চিহ্ন করে মুক্ত করবো মাতৃভূমি।

প্রিয় কমরেড তুমি চাওনি তোমার সুখ শান্তি

তুমি চেয়েছিলে শোষিত জনতার মুক্তি,

তাই করে গেছো আত্মদান

করনি তো আদর্শ বিসর্জন।

প্রিয় কমরেড কতদিন তুমি ঘুমাওনি

আজ তুমি ঘুমাও, আমরা জেগে আছি।

শত্রুর প্রতিরোধ দুর্গ গুড়িয়ে দিয়ে

শত্রুর প্রতিরোধ-ব্যুহ ভেঙে দিয়ে,

এ মাটিতে তোমার স্বপ্ন

আমরা করবোই বাস্তবায়ন ॥

কমরেড তুমি ঘুমাও

কমরেড তুমি ঘুমাও,

আমরা জেগে থাকবো

তোমার স্বপ্ন আমরা সফল করবো।

হাজার জনতার স্বপ্ন সফল করতে

কতদিন তুমি পারোনি ঘুমুতে,

অনেক ক্লান্তি তোমার চোখে-মুখে

কমরেড তুমি ঘুমাও,

আমরা জেগে থাকবো-

তোমার অসমাপ্ত কাজ

আমরা শেষ করবো।

মুক্তির লাল সূর্য আনতে যেয়ে

তোমার বক্ষ লাল হল রক্তে,

তোমার রক্ত ছুয়ে শপথ নিলাম

কথা দিলাম আমরা কথা রাখবো,

এ মাটিতে বিজয়ের নিশান

আমরা উড়াবো ॥

আমরা একটা নতুন পৃথিবী গড়বো

আমরা একটা নতুন পৃথিবী গড়বো

যেখানে শোষণ বঞ্চনা হবে ইতিহাস হবে,

আমাদের থামলে চলবেনা

শত বাধা-বিঘ্ন পেরিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

এ অমারাত্রির কালো পতাকা আমরা ছিড়বোই

সূর্য-সফল রক্তিম ভোর আনবোই,

জানি কিছু পেতে হলে কিছু মূল্য তো দিতে হবে।

আমরা কটি তরুণ তাজা প্রাণ, শপথে উদ্দীপ্ত

ভয় ভীতি প্রলোভনে কখন হবোনা কুন্ঠিত,

জেগে উঠবে সুপ্ত জনতা আমাদের কলরবে ॥

জনতার শক্তি বড় শক্তি

জনতার শক্তি বড় শক্তি

এই বিশ্বাসে থেকো অবিচল,

এগিয়ে চল বুকে নিয়ে

শক্তি সাহস আর মনোবল।

দিগন্তে কালো মেঘ কেটে গিয়ে

দেখা দেবে আলো নব সূর্যোদয়ে-

আজ প্রতীক্ষাই আমাদের সম্বল।

রাত শেষ হবে না ভেবে

যারা শুধুই ঘুমিয়ে থাকে,

তাদের জীবনে হবেনা প্রভাত-

আধারের কাছে তারা পরাজিত।

আধার দেখে পেওনা ভয়

আধারই শেষ কথা নয়-

আধার শেষে হবেই সূর্যোদয়।

জনতার সংঘবদ্ধ শক্তির কাছে

যুগে যুগে দুর্বৃত্তরা হার মেনেছে-

জনতার বিজয় অনিবার্য ॥

তুমি আমি কেউ নইকো আলাদা

তুমি আমি কেউ নইকো আলাদা

শ্রমে আর ঘামে বাধা

আমাদের সবার জীবন।

কালের চাকা এতদিন

ঘুরিয়ে এসেছি ক্লান্তিবিহীন-

ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে হবে এখন।

আমরা মজুর আমরা কৃষক

দেশ-জাতি ভেদে নইকো পৃথক-

আমাদের বড় পরিচয়

আমরা মেহনতি জনগণ।

রক্তে আর ঘামের দামে সব বিলিয়ে

পেয়েছি অল্প অনেক মূল্য দিয়ে-

এক লক্ষ্যে আমরা ঐক্যবদ্ধ এখন ॥

শ্রমজীবি জনতা গড়ে তোল ঐক্য

শ্রমজীবি জনতা গড়ে তোল ঐক্য

আর এগিয়ে চল ঠিক রেখে লক্ষ্য,

মুক্তি আসবেই আসবে।

সেদিন আর বেশী দূরে নয়

আধার রাতের শেষে হবে সূর্যোদয়,

পূর্বাকাশে সূর্য উঠবেই উঠবে।

দীর্ঘদিনের জঞ্জাল জেনো

একদিনে হবে না পরিচ্ছন্ন,

তোমাকে অপেক্ষা করতেই হবে।

যদি পেয়ে বসে ক্লান্তি, মৃত্যুভয়

তবে জেনো এ পথ তোমার নয়,

তোমাকে হেসে হেসে মরতে হবে।

জীবনের মর্যাদার জন্য জীবন

তোমাকে দিতে হবে বিসর্জন,

শেষ পর্যন্ত তোমাকে লড়তে হবে ॥

একটি মুক্ত পৃথিবীর জন্য আমরা লড়ছি

একটি মুক্ত পৃথিবীর জন্য আমরা লড়ছি

সুন্দর আগামীর জন্য পথে নেমেছি।

জয় হবে শুধু এই বিশ্বাস নিয়ে

লক্ষ্যে থেকে অবিচল চলছি এগিয়ে-

তোমাদের ও সাথী হতে আহ্বান করছি।

আমরা মানবো না কোন বাধা যুক্তি

আনবোই মুক্তি আমৃত্যু চুক্তি,

নতুন শপথে বলীয়ান হয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি

নতুন করে আমরা আবার শপথ নিয়েছি।

যতবার নিভে যাক প্রদীপ্ত মশাল

আলোর প্রত্যাশা থাকবে চিরকাল,

আলোকের অভিসারে তোমাদের ডাকছি

এ অভিযাত্রায় সবাইকে শরীক হতে বলছি।

শাসকের দম্ভ যত সংহত হোক, তবু চিরস্থায়ী নয়

ইতিহাস সাক্ষী, শেষ পর্যন্ত জনতার হয়েছে জয়।

জাগ্রত জনতার জোয়ারে

সব অন্যায় অবিচার যাবে ভেসে,

এই প্রত্যয়ে আমরা আজ পথ চলছি।

যত উদ্ধত দুর্বিনীত ক্ষমতাসীন

জনতার কাছে হার মেনেছে চিরদিন ;

হয়তো লাগতে পারে দীর্ঘ সময়

তবু নিশ্চিত জনতার বিজয়-

সম্মুখে মুক্তির দিন দিব্য চোখে দেখছি ॥

আমাদের কেন খুজো হন্যে হয়ে

আমাদের কেন খুজো হন্যে হয়ে

নগরে বন্দরে, লোকালয়ে, জনপদে

আমরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছি পৃথিবীর সর্বত্র।

আমরা আছি তোমাদের অন্তরে

যেখানে প্রাণের অসহায় দাবী চাপা পড়ে আছে।

নিপীড়িত জনতার মুক্তি আমাদের কর্মসূচী

আমরা সেখানেই দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলি।

যেখানেই অন্যায় অবিচার উদ্ধত মাথা তুলে দাড়ায়

পথ রুদ্ধ করে দাড়ায় মানবতার অগ্রযাত্রায়,

আমরা গর্জে উঠে স্তব্ধ করে দিই

তার উদ্ধত প্রয়াস।

আমরা তো এ মাটির সন্তান

তোমাদের ভাই বন্ধু স্বজন,

আমরা লড়ছি তোমাদের জন্যই

একটি শোষণ-মুক্ত সমতা ভিত্তিক পৃথিবীর জন্য।

শাসক বদল তো তোমরা দেখেছো কতবার

এবার শোষক নিশ্চিহ্ন হবার পালা-

শাসনের ছদ্মবেশে শোষণের মহড়া আর নয়,

চুড়ান্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করে

আমরা এবার মূল দুর্গে দেবো হানা।

আমারা তাই উদাত্ত আহ্বান জানাই এসো-

দুঃখ দারিদ্র আর অভাবের সাথে

লড়েছো তো বহুকাল,

পেরেছো জীবনের মূল্য প্রতিষ্ঠা করতে ?

পারোনি, পারবেনা।

এসো, শুধু আর একটিবার এসো

এবার লড়াই করি তাদের বিরুদ্ধে--

যারা সম্পদের পাহাড় গড়ে

অভাব দারিদ্র আর নিত্য অনাহার

আমাদের দিয়েছে উপহার ॥

আমাদের ভুল বুঝো না

আমাদের ভুল বুঝো না

আমরা তোমাদের কথাই বলছি,

একটি সুন্দর আগামীর জন্য

আমরা আজ লড়ছি।

যুগ যুগ ধরে চলছে যে শোষণ বঞ্চনা

এভাবে আর তো মেনে নেয়া যায় না,

এর প্রতিবাদে অস্ত্র হাতে তোলে নিয়েছি।

কোটি জনতার মুখে হাসি ফুটাতে

অনন্ত রাত্রির আধার ঘুচাতে,

নিদ্রা আর আলস্য বিলাস ছেড়ে

আমরা পথে নেমেছি।

তোমাদের ও করি আহ্বান, হও সহযাত্রী

পথ সংক্ষিপ্ত হবে, দ্রুত কেটে যাবে রাত্রি।

এ আধার চিড়ে আলোর সূর্য আনবোই

আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছি ॥

আধার দেখে ভয় পেওনা

আধার দেখে ভয় পেওনা

আধারই শেষ কথা নয়,

আধারের শেষে জানি

হবে সূর্যোদয়।

রাত শেষ হবে না ভেবে

যারা ঘুমিয়ে থাকে,

তাদের জীবনে

আসে না প্রভাত জ্যোতির্ময়।

মহাকাল সাক্ষী

রাত্রি চিরদিন ক্ষণকালীন,

রাত কখন ও অনন্ত হতে পারে না

তুমি জেনো নিশ্চয়।

আধার রাতের শেষে

দেখা দেবে প্রভাত আলো-ঝলমল,

ধৈর্য ধরো বন্ধু

তোমার জন্য অপেক্ষা করছে বিস্ময় ॥

নতুন ভোরে তোমাকে স্বাগত জানাতে

রাত থাকতেই এসেছি আমি চলে,

নতুন প্রভাতে দেখা হবে আমাদের

আমরা সকলে উদযাপন করবো বিজয় ॥

মরতে তো হবে সবাইকে একদিন

মরতে তো হবে সবাইকে একদিন

এমন কেই কি আছে মৃত্যুহীন ?

মরতে হবে একদিন যখন

এসো সত্যের জন্য করি মৃত্যুকে আলিঙ্গন।

যত ভীরু কাপুরুষ ভয় পায় মৃত্যুকে

বাচার জন্য তারা লুকায়ে রাখে আপনাকে,

তবু মৃত্যু তাদের ছাড়েনি পিছন

মৃত্যুকে কেউ কি এড়াতে পেরেছে কখন?

এসো আজ মৃত্যুকে পরিহাস করি

এসো হাসতে হাসতে মরতে শিখি,

একটি মহৎ লক্ষ্যের জন্য আজ

এসো আমরা উৎসর্গ করি আমাদের জীবন।

সত্যের জন্য যারা লড়ে দিয়ে গেছে প্রাণ

ইতিহাস ভুলেনি তাদের অমূল্য আত্মদান,

মৃত্যু তাদের কাছে হয়েছে পরাজিত

আমাদের স্মরণে তারা জীবিত এখন।

মৃত্যুভয়ে যারা করেনি কভু নতশির

মরে গিয়ে তারা আজ মৃত্যুঞ্জয়ী বীর-

সেইসব চিরঞ্জীব বীরের উদ্দেশ্যে

আজ আমরা করছি শ্রদ্ধা নিবেদন ॥

মানুষ আর কতটুকু মানুষ

মানুষ আর কতটুকু মানুষ

হয়ে গেছে আজকাল বড় বেশী বন্য,

এতটাই বেশী যে ভ্রম হয়

একি জনপদ নাকি শ্বাপদ-অরণ্য?

মানুষ কতটুকু মানুষ হয়ে জন্মায়

জীবন কাটে মানুষ হওয়ার সাধনায়,

মানুষ হয়ে জন্ম নিলে ও

মানুষের মত মানুষ সংখ্যায় নগণ্য।

মানুষ নামে কত পশু ঘুরে বেড়ায়

সামনে পেলে নখর দিয়ে খামচায়-

সুযোগ পেলে ক্ষত বিক্ষত করে

ভাবে বুঝি হয়ে গেলো ধন্য।

মানুষ সারাক্ষণ মানুষ থাকে না

অমানুষ হতে কখন ও দেরী হয়না,

ভেতরের পশু কখন জেগে উঠে

কেউ কখনো জানতে পারেনা ॥

প্রাণের যত ভীরুতা আর

প্রাণের যত ভীরুতা আর মিথ্যে আনুগত্যবোধ

মন থেকে সমূলে উপড়ে ফেলো আর একটিবার,

দেখবে প্রত্যেকটি মানুষ এক একটি খাটি বিপ্লবী।

প্রত্যেকের অন্তরে

এক একটি সুপ্ত আগ্নেয় প্রতিভা

দুঃসহ বঞ্চনার দাহে শেষবারের মত

জ্বলে উঠবার অপেক্ষায় আছে।

পৃথিবীর ইতিহাস

শাশ্বত জনতার সংগ্রামের ইতিহাস,

আপোষহীন অব্যাহত সংগ্রামের ইতিহাস-

সংগ্রামেই মুক্তি

আন্দোলনই জীবন,

এসো, এই অনিবার্য সত্যকে আজ উপলব্দি করতে শিখি ॥

সময় এসেছে এবার

সময় এসেছে এবার, বন্ধু জাগো-

সত্যিকারের মানুষকে চিনতে শেখো।

যারা শ্রমে ঘামে জীবনের দামে

সভ্যতার পথ করে রচনা -

সভ্যতার চাকা সচল রাখে নিরন্তর

ফিরিয়ে দাও তাদের প্রকৃত মানুষের সম্মান।

যারা রুক্ষ মাঠের পটভূমিতে বুনে

ফসলের কারুকাজ

সূচীমূখ লাঙ্গলের তুলিতে-

যারা পাহাড় ভেঙ্গে

অরণ্য কেটে গড়ে পথ,

সভ্যতার তারাই পথিকৃৎ-

যাদের হাতুড়ির শব্দ

মোহন সঙ্গীতের মত বেজে উঠে

জীবনের প্রয়োজনে-

যারা গড়ে রক্তে আর ঘামে আর অশ্রুজলের দামে

সুরম্য প্রসাদ, নগর, অট্টালিকা-

তারাই সত্যিকার কবি, শিল্পিী, ভাস্কর

সভ্যতার পথিকৃৎ-

জীবনের সার্থক রূপকার।

যুগের প্রয়োজনে সময় আজ কথা বলে-

যত সম্মানের প্রাপ্যে

তাদের অগ্রাধিকার।

অনেক মূল্যে আজ শোধ করতে হবে

সে সব যুগ যুগ উপেক্ষিত

প্রতিভার মহৎ ঋণ-

সময় এসেছে বন্ধু আজ প্রস্তুত হও ॥

দিগন্তে আজ ঝড় অত্যাসন্ন

দিগন্তে আজ ঝড় অত্যাসন্ন

দেখো কাদছে পৃথিবী বিপন্ন।

আজ সুন্দর একটি পৃথিবীর জন্য

বড় প্রয়োজন তোমার তারুণ্য,

হে তরুণ তোমার চেতনার আলোতে

আধার পৃথিবী তুমি করো প্রসন্ন।

যারা পড়ে আছে আধারে মুমূর্ষু বিষন্ন

যারা আজ হতাশায় নৈরাশ্যে অবসন্ন ;

তাদের আজ জাগিয়ে তোলার

দুরূহ দায়িত্ব কাধে তোমার,

হে তরুণ আজ সময় এসেছে

দেখাও তোমার শক্তি সাহস অনন্য ॥

শেষ যুদ্ধের প্রস্তুতি চলছে এখানে

শেষ যুদ্ধের প্রস্তুতি চলছে এখানে

বন্ধু এখন কথা নয়, এখন যাই

তুমি ও চলে এসো, দেখা হবে রণাঙ্গণে।

বাচার মত বাচতে চাই

এ দাবীতে শুরু হয়েছে লড়াই-

হয় জয় নয় মৃত্যু, ফেরার অবকাশ নাই পেছনে।

যুগ যুগ ধরে সঞ্চিত শোষণ বঞ্চনার

অবসান চায় আজ, দাবী জনতার

যারা আসেনি তাদের ও সমর্থন আছে পেছনে।

রক্তের দামে আমরা এবার

করবো আদায় বাচার অধিকার,

হাসতে হাসতে মরবো দলে দলে অম্লান বদনে ॥

আমাদের সঙ্গী জাগ্রত জনতা

আমাদের সঙ্গী জাগ্রত জনতা

আমরা তো নই একা,

আধারের বুক চিড়ে আমরা

জাগাবো আলোর রেখা।

আমাদের আছে প্রত্যয়

জয় হবেই আমাদের জয়,

শুধু বিশ্বাসকে সম্বল করে

চলছি পথ আজ আধার-ঢাকা।

যাদের বুকে ভয়, চোখে সংশয়

তাদেরকে ফিরে যেতে বলি,

তারা ফিরে যাক, শুধু থাক

কটি তরুণ তাজা প্রাণ স্পর্ধা-মাখা ॥

আজ লাঞ্চিত বঞ্চিত মানুষের দীর্ঘশ্বাসে

আজ লাঞ্চিত বঞ্চিত মানুষের দীর্ঘশ্বাসে

বাতাস যেন ভারী হয়ে আছে,

নিঃশ্বাস নিতে ও কষ্ট।

কোথায় মানব-দরদী বন্ধুজন

মানুষের মুক্তি নিশ্চিত করার এখনই সময়

হয়ে গেছে তা স্পষ্ট।

বিপন্ন জনতার পাশে দাড়াও

অনেক সময় হয়েছে বিলম্ব।

কোটি জনতার জীবন হবে দুর্বিষহ

মুষ্টিমেয় ক’জনের হাতে,

নীরবে আর মেনে নেয়া যায়না কিছুতে-

সহিষ্ণুতার পরাকাষ্ঠা হয়েছে যথেষ্ট ॥

আমরা চাইতে আসিনি কিছু

আমরা চাইতে আসিনি কিছু

নিতে আসিনি কোন দান,

আমরা শুধু বলতে এসেছি

এ শোষণ বঞ্চনার হোক অবসান।

এ অন্যায় অসম সমাজের আর

আমরা হতে চাই না অংশীদার,

আমরা এ শ্বাসরুদ্ধকর

পরিস্থিতি থেকে চাই পরিত্রাণ।

আমরা শোষণ বঞ্চনাবিহীন

একটি পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেছি চিরদিন,

আমাদের দাবী ন্যায়সঙ্গত

আমরা তো নই সন্দিহান।

এসো জাগ্রত জনতা বাংলার

এভাবে চুপ করে থেকো না আর,

অনেক দেরী হয়ে গেছে

আজই শুরু হোক অভিযান ॥

ভাগ্যের দোহাই দিয়ে করবে প্রবঞ্চনা

ভাগ্যের দোহাই দিয়ে করবে প্রবঞ্চনা কত আর

আমরা এসেছি আপন ভাগ্য বুঝে নিতে এবার।

আমরা তো পড়ে পড়ে মার খেতে

রাজী নই কোনমতে -

আমরা তো কারো চোখ রাঙানির ধারি না ধার।

আমরা যদি হাত রাখি হাতে

কাধে কাধ মিলিয়ে নামি রাজপথে -

আমাদের অগ্রাভিযান রোধে তখন সাধ্য কার?

আমরা কৃষক মাটির সন্তান

আমরা কৃষক এ মাটির সন্তান

রোদে বৃষ্টিতে সংগ্রাম করে --

আমরা ফলাই ফসল

এ মাটির বুক চিরে।

আমরা আপনার উদয়াস্ত শ্রমে

বেচে থাকি প্রকৃতির নিয়মে --

বসে থাকি না কারো মুখ চেয়ে

দুহাত বাড়ায়ে ধরে।

এ মাটির খাটি বন্ধু বল কে আর?

এ মাটিতে আমাদের জন্মগত অধিকার -

আর কারো দাবী আমরা মানবো না এ মাটির পরে ॥

বেশী কিছু চাইনি তো আমরা

বেশী কিছু চাইনি তো আমরা

দুমুঠো ভাত আর পরণের কাপড়,

একটু ঘুমানোর জায়গা, তাও আমরা কেন পাবনা ?

আমাদের শ্রমে-ঘামে এ পৃথিবী হল বাসযোগ্য

তবুও সমাজে আমরা কেন গ্রহণ-অযোগ্য?

সময় এসেছে বুঝিয়ে দাও এবার আমাদের পাওনা।

মাটির পৃথিবী মানুষ হল যাদের হাতে

এই পৃথিবীর দখল এসেছে তারা বুঝে নিতে,

আমরা তো আজ খালি হাতে কিছুতে ফিরে যাব না ॥

মানুষের অধিকার আজ ভুলুন্ঠিত

মানুষের অধিকার আজ ভুলুন্ঠিত

বন্ধু তুমি প্রস্তুত হও, দিগন্তে ঝড় আসন্ন।

কোটি মানুষের সুখ-শান্তি-অধিকার

কিছু লোকের কাছে জিম্মি হবে বারবার;

কোটি মানুষের গ্রাস কিছু লোক কেড়ে খাবে

আর সবাই নীরবে চেয়ে চেয়ে দেখবে--

এত অন্যায় চলতে দেয়া যায়না নির্বিঘ্ন।

পথে নেমে আমরা তো আর ফিরে যেতে পারিনা,

আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ-

আমরা তো সহযোদ্ধাদের রক্তঋণে দায়বদ্ধ।

কে এসেছে আর কে আসলো না

সে হিসেব নিলে চলবে না,

আমাদের এগিয়ে যেতে হবে, নেই কোন বিকল্প।

আমাদের মাঝ থেকে

আজ যারা হারিয়ে গেছে,

তাদের স্বপ্ন সফল করে আমরা এ ঋণ শোধ করবো ॥

এই মাটি এই আকাশ নয় কারো একার

এই মাটি এই আকাশ নয় কারো একার

এই আলো এই বাতাস তোমার আমার সবার।

যত করো ভাগ এ মাটিকে রেখা দিয়ে

মনটাই শুধু ভাগ হয়ে যাবে -

কেউ করতে পারেনি খন্ডন অখন্ডতা বসুন্ধরার।

এই সূর্যটা চিরটাকাল এমনি করে

দিয়ে যাবে আলো সকলের ঘরে ঘরে -

এ আকাশ ছায়া হয়ে রবে মাথার পরে সবার ॥

দেখতে দেখতে ক্রমশ সব কিছু চলে যাচ্ছে

দেখতে দেখতে ক্রমশ সব কিছু চলে যাচ্ছে

বিনষ্টদের অধিকারে,

পৃথিবীর বিস্তৃর্ণ ভূভাগ চলে যাচ্ছে

নষ্টদের দখলে ক্রমাগত।

আজ আর কোথাও মেঘমুক্ত

নির্মল আকাশ দেখা যায় না,

বিষাক্ত কালো ধোয়ার ধূম্র কুন্ডলী

ঢেকে দিয়েছে অশুভ ডানায়

সমস্ত আকাশ ;

অশুভ ঝড়ে আজ তছনছ

চেতনার রাজ্যে সমৃদ্ধ ফুলের বাগান,

চতুর্দিকে আজ হিংস্র শ্বাপদের

অসহ্য বিজয়োল্লাস-

আর বর্বর তান্ডব লীলা।

গোটা পৃথিবী আজ

পলায়নপর আতংকিত মানুষের পশ্চাদভূমি।

পৃথিবীর মানুষ যেন আজ পশুর অবতার।

একদিন শ্বাপদসংকুল

অরণ্যময় পৃথিবী থেকে পশুদের তাড়িয়ে

যে পৃথিবী আমরা গড়েছিলাম

সেই পৃথিবী আজ পুনর্দখল করেছে পশুরা।

তাই দিকে দিকে আজ পাশবিকতার

জয়জয়কার।

বিকারগ্রস্থ অশুভ দানবের পৈশাচিক কোলাহল।

স্বীকার করি আমরা হারিয়ে ফেলেছি

আমাদের যৌবন,

আর যৌবনের সোনালী দিনগুলো-

পীড়নের আর ব্যভিচারের অসহ্য যাতাকলে।

জানি আমরা অপব্যয় করে ফেলেছি

আমাদের মূল্যবান সময়

ক্ষমাহীন নিবীর্যতায়।

তবু আসুন আমরা আবার পশুদের হটিয়ে

মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করি

এই ভূপৃষ্ঠে।

আসুন আমরা এই অন্তিম মূহুর্তে

আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য

প্রতিশ্রুতিশীল এক পৃথিবী নির্মাণের

সৃজন প্রয়াসে

আর একবার শপথবদ্ধ হই ॥

অপেক্ষায় আছি

অপেক্ষায় আছি

কবে মানুষের জন্য ঘোষিত হবে

একটা অভয় জনপদ-

যেখানে নির্জন পথের মধ্য দিয়ে

মধ্যরাতের আলো আধারে

একা একা হেটে যেতে পারবো নির্ভয়ে

ঘরে-ফেরা-মন নিয়ে শীষ দিতে দিতে।

যেখানে থাকবে না শোষণ বঞ্চনার ভয়

অভাব আর দারিদ্রের ভীতিকর হাতছানি-

যেখানে অত্যাচারিত হয়েও

অত্যাচারীকে অত্যাচারী বলার জন্য

কোন মাশুল দিতে হবে না।

যেখানে কুমারী নারীর পবিত্র শরীরে

লোভী নরপশু বিনা বাধায় পারবে না

হিংস্র নখের আচড় বসাতে।

ফুটফুটে জোছনায় নিবেদনের পুষ্প হাতে

কোন প্রিয় নারীর একা একা অভিসারে আসার

আনন্দ-ঘন প্রতীক্ষায়

থাকবে না কোন কুটিল বাধা।

অভয়ারণ্যে আজ পশুরা নিরাপদ-

শান্তিপ্রিয় অসহায় মানুষেরা আজ

তাদের হাতে জিম্মি ॥

জনতার শক্তি বড় শক্তি এই মনোবলে

জনতার শক্তি বড় শক্তি এই মনোবলে

অন্তরে নিয়ে প্রত্যয় এগিয়ে যাও চলে।

পশুত্বের কাছে আজ হোক নাহয় দুদিন পরে

মানবতার জয় হয়েছে যুগ যুগ ধরে,

আজও টিকে আছে মানবতা আপন ঐশ্বর্য বলে-

অসুর চিরদিন পদানত হবে সুরের পদতলে।

যতো হোক হাক-ডাক, অল্প ওরা সংখ্যায়

হাজার জনতার কাছে ওরা অসহায়-

পথ ছেড়ে দাড়াবে ওরা সবাই, আমরা ঐক্যবদ্ধ হলে

সমবেত হও সবাই তাই আজ এক পতাকা তলে ॥

আমরা খুব কাছে এসে গেছি

আমরা খুব কাছে এসে গেছি

দেরী নেই তোমাদের কাছে পৌছতে,

ভয় নেই বন্ধু আর-

আমরা এসেছি তোমাদের সাথে থেকে লড়তে

তোমাদেরই সহযোদ্ধা হতে।

আমরা শতাব্দীর দৃপ্ত তরুণ

যুবক বেপরোয়া বেয়াড়া-

সময়ের অসমসাহসী অবলম্বন|

আমরা যদি জেগে উঠি

মহাকাল জেগে উঠবে-

আমরা যদি ফেটে পড়ি বিক্ষোভে

একটা কিছু হবে,

একটা কিছু তো হবে ॥

হে তরুণ, তোমা পানে চেয়ে আছে পৃথিবী

হে তরুণ, তোমা পানে চেয়ে আছে পৃথিবী

একটা কিছু করো এবার-

তুমি দিতে পারো আমাদের একটি নতুন পৃথিবী উপহার।

মৃত শ্মশানের এই অচলায়তনে

তুমি সাড়া আনো প্রচন্ড আঘাত হেনে,

বল এই পৃথিবী দানবের নয়, মানবেরই শুধু অধিকার।

গোটা পৃথিবী ক্রমে যাচ্ছে চলে

চেয়ে দেখো দৈত্য দানবের দখলে-

লাঞ্চিত মানবতা আজ চায় শরণ তোমার,

তুমি বল আমি এসেছি, ভয় নাই আর।

হে তরুণ আমি শুনেছি তোমার পদধ্বনি

আমার প্রাণে বাজছে তোমার আগমনী-

হে তরুণ শক্তি দেবতা, তোমারে জানাই নমস্কার ॥

হে তরুণ, তুমি শুধু বল জয় হবে

হে তরুণ, তুমি শুধু বল জয় হবে

আমি বলবো জয় হয়ে গেছে-

তুমি বল রাত কেটে যাবে,

আমি বলবো প্রভাত এসে গেছে।

তোমার মনে জাগলে সুন্দরের স্বপন

রচে দিতে পারো রঙে ভরা একটি ভুবন

তুমি পারনা এমন কিছু নেই,

মহাকাল প্রমাণ দিয়েছে।

তোমার হৃদয়ে যদি জাগে ধ্বংস-বিলাস

জানি উল্টে যাবে এই সৃষ্টি-আকাশ-

সময় তোমাকে আহ্বান করছে,

তোমার জাগার সময় হয়েছে ॥

মুক্তি পিয়াসী

আমরা করি খেলা হেলার ছলে

জীবন মৃত্যুর মাঝখানে বসি,

কন্ঠে আমাদের নতুন দিনের গান

অবাক চোখে দেখছে বিশ্ববাসী।

প্রতি ধমনিতে রক্ত কণিকায়

একি মত্ততা একি উল্লাস,

চেতনায় চেতনায় ছড়িয়ে পড়ে

এ কোন সুরের বিদ্যুৎ বিকাশ,

মরণ মাঝে আমরা আবার

নব জন্ম লইতে আসি।

একটি বিন্দু রক্ত হতে

ছড়িয়ে পড়ে লক্ষ রক্তকণা,

রক্ত আখরে আমরা আকি

বিজয় দিনের স্বপ্ন আলপনা।

আমরা মরণ খেলায় মেতে

বাজাই নব জীবনের বাশী।

ঘরের মাকে ফেলে এসেছি

বিশ্ব মাতার কাদন শুনে-

বাধন নাশার সাধন রুখবে

এবার কোন বাধন হেনে,

আমরা আগুন নিয়ে খেলা করি

শেষে ফাগুন হয়ে হাসি ॥

সংক্ষুব্ধ পঙক্তিমালা

আমাদের যাত্রা হল শুরু আজ হতে

নব দিগন্তের রক্ত লাল পথে ॥

হাজার বিঘ্ন বাধাতে নির্ভয়

জয় হবে, হবে সত্যের জয়--

সেই অবিচল প্রত্যয়ে এসেছি এগিয়ে যেতে॥

রাজপথে নামে ঢল এবার

প্রতিবাদ মুখর হাজার-জনতার,

বাধা ভাঙা জনতার ঢেউ কেউ পারবেনা রুখতে॥

এখনও যারা গভীর ঘুমে অচেতন

তাদের চোখে আনবো জাগরণ,

ঘটাবো এবার প্রচন্ড বিষ্ফোরণ, চমকে দেবো পৃথিবীটাকে॥

মরণের পথে করে জীবন দান

পেয়েছি এপথে অমৃতের সন্ধান,

মত্যুজয়ী গান গেয়ে গেয়ে আলিঙ্গন করি মৃত্যুকে॥

দিনে দিনে তোমাদের বাড়ে অত্যাচার

কন্ঠে তোমাদের উদ্ধত অহংকার,

প্রতিজ্ঞা কঠিন হয় মন আমার, আমি হয়ে উঠি দুঃসাহসী॥

আমি আসন্ন ঝড়ের সব আয়োজন

একে একে দুহাতে করে যাই সমাপন,

পরিকল্পনার পুংখানুপুংখ বিচার বিশ্লেষণ করতে বসি ॥

সমুখে আরো আধার রয়েছে বাকি

আরো দুর্গম পথ চলার বাকী,

এখনও অনেক রয়ে গেছে ফাকি, চাওয়া পাওয়ার মাঝখানে ॥

এই মুক্তি বিজয় জানি সকলের নয়

এখানে এসে সব পাওয়ার শেষ নয়,

এক যুদ্ধ শেষে আর এক যুদ্ধ শুরুর পালা এখানে ॥

পথে না নেমে পথের ভয়ে ভীত

আমরা শুধু শুধু হয়েছি বিচলিত,

বিজয় আমাদের হয়েছে বিলম্বিত, Ah_v কালক্ষয় ॥

কাজ করে যাই বিরামহীন

সংক্ষিপ্ত করি ক্রমশঃ মুক্তির দিন,

সংকটে সংঘাতে বুকে আছে আমাদের অবিচল প্রত্যয় ॥

আমরা মানুষ, আমাদের মানুষের প্রাণ

সকলের সাথে দিতে হবে ভাগ সমান,

সকলের মাঝখানে স্থান দিতে হবে আমাদেরকে ॥

নেমেছি তাই আজ রাজপথে,

সংগ্রামী মহাজনতার সাথে

ভাগ্য বেধেছি আপন হাতে, দৃঢ় করেছি প্রাণের বন্ধনকে ॥

কালের বক্ষে চরম সংকট-গ্রস্থ

আমাদের জীবন আমাদের অস্তিত্ব

এ সংগ্রামে আমাদের বিজয় লাভ করতে হবেই ॥

পুঞ্জিত ক্ষোভ বঞ্চিত হিয়ায়

রত্তে রক্তে বিদ্রোহ ছড়ায়,

এ অনিবার্য সংঘর্ষ রোধ করা যাবেনা কিছুতেই ॥

জানি এপথে শত বিঘ্ন সমস্যা,

তবু আলোকের পথে এ তপস্যা

অব্যাহত আমাদের, এ অমাবস্যা পরাভূত হবে একদিন ॥

আজ চলা জানি ছায়া অন্ধকারে

বাধাবিঘ্নের মুখোমুখি বারেবারে,

এ পথের প্রান্তে জানি প্রতীক্ষিত সূর্য গুণছে দিন ॥

আজ সহি আঘাত শত নির্যাতন

পরি শৃঙ্খল করি কারাবরণ,

চির শৃঙ্খলমুক্ত চাই মহাজীবন, সামনে আছে ঠিকানা ॥

চারিদিকে আজ অবিশ্বাস সংশয়

প্রতিকুল স্রোত বৈরী সময়,

আমাদের সাহসী প্রত্যয় জাগাবে বিশ্বের চেতনা ॥

অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামের

শুরু কবে অঘোষিত যুদ্ধ আমাদের,

আমরা এবার চুড়ান্ত সংগ্রামে নেমেছি রাজপথে ॥

যত হোক চক্রান্তের জাল বিস্তার,

নস্যাৎ করতে দেয়া হবেনা আর

লক্ষ জনতার শাশ্বত আন্দোলন এবার কিছুতে ॥

সংগ্রামে সন্ত্রাসে আজও সমুন্নত

শত ভীতি প্রলোভনে হইনি নত,

আমাদের প্রচেষ্টা চিরদিন অব্যাহত থাকবে ॥

নিরাপদ তন্দ্রার লোভে মোহ-মায়ায়

দেবনা স্বাক্ষর দাসত্বের মুচলেকায়,

আমাদের সময়ের অগ্রগামী কালের অগ্রণী হতে হবে ॥

রক্তে আমাদের উত্তরাধিকার

উত্তর কালের সাহসী চেতনার,

সময়ের কাছে মানিনি হার প্রমাণ করবো নতুন করে ॥

আমার মুখর কন্ঠ মূক হবার আগে

বিক্ষোভে ফেটে পড়তে দাও আমাকে,

শেষবারের মত গর্জে উঠতে দাও আমাদের একই স্বরে ॥

বিঘ্নবাধা প্রলোভনে হবনা বন্দী

আমরা বুঝেছি কালের দূরভিসন্ধি,

সময়ের সাহসী প্রতিদ্বন্ধী আপোষহীন চিরদিন ॥

সময়ের আনুকুল্য পৃষ্ঠপোষকতা

পেয়ে যারা করেছে বিশ্বাসঘাতকতা

শাশ্বত মানবতার সাথে, তাদের অপরাধ ক্ষমাহীন ॥

জয় কিংবা পরাজয় বড় কথা নয়

বুকে রেখে বড় প্রত্যয়,

বড় হল আমাদের অবিরাম কাজ করে যাওয়া ॥

শ্বাশত জনতার মুক্তি ছাড়া আর

নেই আর কিছু আমাদের চাওয়ার,

আমাদের নেই কোন নিজস্ব চাওয়া পাওয়া ॥

আমরা গড়েছি দুর্গ এ মাটির পরে

এদেশের মাটিতে প্রতিটি ঘরে ঘরে,

প্রতি চিত্তের অতল গহ্বরে আমরা গেড়েছি ঘাটি ॥

এ পৃথিবী আমরা শ্রমে আর ঘামে

সাজিয়েছি যত্ন করে জীবনের দামে

এবার আপন বক্ষ শোণিতে রাঙাবো এ মাটি ॥

বাণী আর বজ্রের উদাত্ত তান

সময়ের নির্দেশে হয়ে গেছে এক প্রাণ,

কালের বিষ্ফোরম্মুখ বক্ষে আমরা হয়েছি নিক্ষিপ্ত ॥

জনতার মুক্তি নিয়েই তবে ঘরে ফিরবো

সংগ্রামের ফসল ঘরে তুলেই বিশ্রাম নেবো,

আমরা চির সংগ্রামী চেতনায় আজ উদ্দীপ্ত ॥

বন্ধ্যাকালের বক্ষে ফলাবো ফসল

আধার রাতের খুলে অর্গল,

আমরা আনবো আলোর উষা এ আমাদের অঙ্গীকার ॥

এ বিপ্লব ছড়িয়ে দিতে হবে পথে প্রান্তরে

গ্রামে আর গঞ্জে আর নগরে বন্দরে,

এ মহান সংগ্রামে নেই কারো একচেটিয়া অধিকার ॥

পেতে চাইনা বাহবা কারো

তিরষ্কারে প্রাণ তিক্ত করো,

চলার পথে বাধা আরো কুটিল হাতে করো রচনা ॥

আমরা সত্য-সন্ধানী আধার ঠেলে

আলোকিত ভোর আনবো তুলে,

আলোকের পথে চলবে আমাদের অবিরাম সাধনা ॥